পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতার গুরুতর অভিযোগ
‘শরীরে যখন কোনো নির্যাতনের দাগ নেই, তখন পুলিশ কীভাবে বলছে এটা গণপিটুনির ঘটনা? এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সাজানো হয়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। টাকা খাইয়ে এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।’
আজ বুধবার সকালে যশোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠাগার সম্পাদক দেলোয়ার রহমান দীপু এ অভিযোগ করেন। গত রোববার দেলোয়ারের ভাগ্নে ইসমাইল শেখ ও তাঁর বন্ধু আল আমিনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। urgentPhoto
নিহত ইসমাইল যশোর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র আর আল আমিন ছিলেন ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী।
পুলিশ দাবি করেছে, যশোর-মাগুরা সড়কের হুদোর মোড় এলাকায় গত রোববার ইসমাইল ও আল আমিন বরুণ তরফদার নামে একজনের মোটরসাইকেল ছিনতাই করার সময় ধরা পড়েন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের গণপিটুনিতে ওই দুই যুবক নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
দেলোয়ার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ইসমাইলকে রাত সাড়ে ১১টার সময় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন দুপুরে ফোন করে ইসমাইলের লাশ হাসপাতালের মর্গ থেকে শনাক্ত করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। ইসমাইল ও আল আমিনের মৃতদেহের ছবি দেখিয়ে দেলোয়ার বলেন, ‘শরীরের কোথাও গণপিটুনির কোনো দাগ নাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওই এলাকার বাসিন্দারাও জানেন না ছিনতাইয়ের ঘটনা।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহত ইসমাইলের বাবা বেলাল শেখ, মা রেহানা বেলাল, বড় মামা মঞ্জুরুল আলম, নিহত আল আমিনের বড় ভাই রবিউল ইসলাম, চাচা ইনসার আলী উপস্থিত ছিলেন।
দেলোয়ার রহমান বলেন, ‘ছিনতাইয়ের বিষয়টি পুরোপুরি সাজানো। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুই জানেন না। নিহত ইসমাইল পলিটেকনিক কলেজের কম্পিউটার বিভাগের পঞ্চম পর্বের মেধাবী ছাত্র। ছয় মাস পরেই সে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবে বের হতো।’
দেলোয়ার আরো বলেন, ‘দুজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে গণপিটুনির চিহ্ন নেই। পুলিশের কাছে থাকা অস্ত্রের বেয়নেট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলেও আমরা মনে করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে দেলোয়ার বলেন, ‘বরুণ তরফদারের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সঙ্গে ইমরান ও আল আমিনকে জড়ানো হয়েছে। বরুণের কোনো আত্মীয়র সঙ্গে ইসমাইল বা আল আমিনের প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি, বরুণ পুলিশকে টাকা খাইয়ে এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছে। ইসমাইলকে রাত সাড়ে ১১টার সময় ডেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসমাইল তখন লুঙ্গি পরা ছিল। টি-শার্ট গায়ে দেওয়া ছিল। গায়ে একটা গামছা ছিল। পরদিন দুপুর বেলায় ফোন করে বলা হয়েছে, আপনার স্বজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে, শনাক্ত করে নিয়ে যান।
দেলোয়ার বলেন, ‘বরুণকে সন্দেহ করছি এ কারণে, যেহেতু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি, সেহেতু বরুণের মোটরসাইকেল ছিনতাই করল কীভাবে?’
‘যেহেতু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সে কারণে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারবে না,’ যোগ করেন দেলোয়ার। তিনি বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হবে। থানা মামলা না নিলে আদালতে মামলা করা হবে।’
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাস আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শিকদার আক্কাস আলী বলেছেন, ‘পুলিশ তো এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই দুজনের কাছে অস্ত্র পেয়েই এলাকাবাসী তাদের গণধোলাই দেয়। অস্ত্রটিও খুব দামি, যা ছোটখাটো সন্ত্রাসীদের কাছে থাকার কথা নয়।’