বান্দরবানে খুনের শিকার সবাই ‘রোহিঙ্গা’
বান্দরবানে ক্যায়ামলং এলাকায় খুন হওয়া চারজন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বলে দাবি পুলিশের। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা সদরের কুহালং ইউনিয়নে শিশুসহ একই পরিবারের চারজনকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
urgentPhoto
নিহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ডলুপাড়ার ক্যায়ামলং এলাকায় একটি বাগানবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আমীন (৪০), তাঁর ছেলে জুনায়েদ (১২), বড় বোন বেগম বাহার (৪৫) ও তাঁর ছেলে ইলিয়াছ (৫)।
পুলিশ ও আত্মীয়স্বজনরা জানায়, সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ডলুপাড়ার ক্যায়ামলং এলাকায় আবদুল মোতালেব নামের এক ব্যক্তির বাগানবাড়িতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আত্মীয়পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন আমীন। বৃহস্পতিবার রাতে বাগানবাড়িতে হানা দিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমীনসহ চারজনকে জবাই করে হত্যা করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। দেখা যায়, ঘরের বাইরে লাকড়ি রাখার স্থানে মোহাম্মদ আমীনের মৃতদেহ পড়ে ছিল। বড় বোন ও তাঁর ছেলের লাশ পড়ে ছিল রান্নাঘরে। আমীনের ছেলে ইলিয়াছের লাশ ছিল একটি ঘরে। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বাথোয়াইচিং মারমাসহ কয়েকজন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলের আশপাশে আমীনের তৃতীয় স্ত্রী নূর নাহার, তাঁর ভাই আবদুল মোনাফসহ কয়েকজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ঘটনার পর থেকেই তাঁরা পলাতক। পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
নিহত বাহার বেগমের ছেলে শফি আলম ও হামিদ অভিযোগ করেন, তাঁর মামার তৃতীয় স্ত্রী নূর নাহার, তাঁর ভাই আবদুল মোনাফ, নূরুল আমীন ও আবদুল শুক্কুর পরিকল্পিতভাবে চারজনকে জবাই করে হত্যা করেছে। কয়েক মাস আগে মামার সঙ্গে ঝগড়া করে নূর নাহার বাপের বাড়িতে চলে যান। তারই সূত্রধরে এই হত্যাকাণ্ড।
এ ঘটনায় নিহত বেগম বাহারের বড় ছেলে শফি আলম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো একসময় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কারণ রান্না করা ভাত পাতিলের মধ্যে রয়ে গেছে। হত্যাকারীরা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভুয়া দুজন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র লাশের পাশে রক্তের ওপর ফেলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি মোবাইল, দুটি ধারালো দা জব্দ করেছে। তবে কেয়ারটেকার আমীনের মোবাইলটি পাওয়া যায়নি। নিহতের আত্মীয়স্বজনরা থানায় আসায় নিহতদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয় কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সানুপ্রু মারমা জানান, কয়েক মাস আগে আমীনের সঙ্গে স্ত্রীর বিরোধের ঘটনা ঘটে। সালিস বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসা করা হলেও তৃতীয় স্ত্রী হয়তো বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি। বিচারে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তৃতীয় স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজনরা মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।