মনটাও যার গ্রাস করেছে আঁধারে
প্রেমের প্রস্তাবে ব্যর্থ হয়ে এক কিশোরীকে কুপিয়ে জখম করেছেন এক ছাত্র। ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরীর অবস্থা গুরুতর। তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের হাড়িভাঙ্গায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএসের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম শাকিল (১৮) নামের ওই ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। তিনিও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ছাত্র।
আরডিআরএস ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার হাতীবান্ধার সিন্দুর্না গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসিক ছাত্র। সে লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কম দৃষ্টি সম্পন্ন জাহাঙ্গীর পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে ২০১০ সাল থেকে থাকছে।
আর ওই কিশোরী পূর্ণ দৃষ্টিহীন। সেও পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকে এবং পাশের দরগারপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
পুলিশ ও আরডিআরএস সূত্রে জানা গেছে, কিছু দিন আগে জাহাঙ্গীর ওই মেয়েটিকে কয়েকবার প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটি তাতে রাজি হয়নি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে জাহাঙ্গীরকে সেখান থেকে বের করে দেওয়ার কথা ওঠে। এতে ক্ষিপ্ত হন তিনি। গত সপ্তাহে গ্রামের বাড়ি থেকে আসার সময় স্থানীয় বাজার থেকে একটি ধারালো ছুরি কিনে কেন্দ্রে যান জাহাঙ্গীর।
পরে আজ শনিবার কেন্দ্র বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা আবাসিক শাখায় ছিলেন না। ভবনের ছাঁদে কিশোরী কাপড় শুকাতে যায়। সেখানে গিয়ে পেছন থেকে গলা চেপে ধরে ছুরি চালান জাহাঙ্গীর। এতে মেয়েটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে জাহাঙ্গীর তার পিঠ, বুক ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আবাসিকের তত্ত্বাবধায়ক ও অন্য শিক্ষার্থীরা সেখানে ছুটে যায়। তারা তাকে উদ্ধার করে জাহাঙ্গীরকে আটকে রাখে। পরে পুনর্বাসন কেন্দ্রের অন্য কর্মকর্তারা গিয়ে মেয়েটিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আজমল হোসেন বলেন, ‘মেয়েটির গলায় ও বুকে গভীর ক্ষত হয়েছে। এ ছাড়া শরীরের আরো কয়েকটি জায়গায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে রংপুরে পাঠানো হয়েছে।’
এ দিকে আজ বিকেলে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আরডিআরএস কর্তৃপক্ষ। সেখানে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানানো হয়।
সেখানে আরডিআরএসের লালমনিরহাটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এরশাদুল হক জানান, আহত মেয়েটির চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে সংস্থাটি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।