উৎসবের গ্রামে লাশের সারি
উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা নিয়ে ফাগুনমেলা দেখতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু উৎসবের সেই গ্রামে অপ্রত্যাশিতভাবে যোগ হলো এক সারি লাশ। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় লাশ হয়ে ফিরতে হলো কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের তিন পরিবারের ১১ সদস্যকে। তাঁদের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চলছে মাতম।
প্রতি বছর ফাল্গুনের প্রথম বুধবার থেকে ছাতিরচর গ্রামের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে বসে সপ্তাহব্যাপী গ্রামীণ মেলা। যেটি ‘ছাতিরচরের মেলা’ বলেই পরিচিত। এই মেলাকে উপলক্ষ করে গ্রামে চলে মেজবানী। আত্মীয়স্বজন আসে বেড়াতে।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের হাসান, নাজমুল ও মানিক মিয়ার পরিবারের বসবাস ঢাকার কামড়াঙ্গীরচর এলাকায়। সেখানে পরিবারের লোকজন নিয়ে দিনমজুরের কাজ করে জীবন-যাপন করেন। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা রিকশা চালানো ও কুলির কাজ করেন। আর নারী সদস্যরা বাসা-বাড়িতে কাজ করেন।
নিহত হালিমা খাতুনের চাচাত ভাই আবদুর রহিম জানান, পরিবার তিনটি হলেও তাঁরা পরস্পরের আত্মীয়। আর থাকেনও একই এলাকায়। কোনো উৎসব বা দাওয়াতে এলে সবাই মিলে এক সঙ্গেই আসেন। এবারও মেলা উপলক্ষে আসার কথা। তবে এর মধ্যে তাদের দাদি এংরেজ বানু মারা যান। আজ তাঁর কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। তাই সবাই মিলে একসঙ্গে দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে সকাল ৬টার দিকে কামড়াঙ্গীরচর থেকে রওনা দেন। পথে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার দড়িকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনসহ মোট ১২ জন নিহত হন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ছাতিরচর গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (৫৫), তাঁর স্ত্রী মাফিয়া খাতুন (৪৫) ও ছেলে অন্তর আলম (১২), একই গ্রামের হাসান মিয়া (৪০), তাঁর স্ত্রী হালিমা খাতুন (৩০) ও ছেলে ঈশান (১০); বাচ্চু মিয়ার মেয়ে ঝুমা আক্তার (১৫), মরম আলীর মেয়ে সাধনা খাতুন ( ৪০) ও তাঁর ভাই নাজমুল হোসেন (৩০), সব্দর আলীর ছেলে হীরা মিয়া (৪৫), নূরে আলমের স্ত্রী শারমিন আক্তার (২২) ও মাইক্রোবাসের চালক আবু সাঈদ আহম্মেদ।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, ‘খবর পাওয়ার পর থেকেই আমাদের জেলা প্রশাসক নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার তৎপরতাসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ করেছেন। আমিও সেখানে ছিলাম। বর্তমানে ছাতির চরের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। সেখানে পৌঁছে পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষে সমবেদনা জানানো হবে। আর্থিকসহ আরো কী সহায়তা করা যায়, সেটিও দেখব।’
খবর পেয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং নরসিংদী ও ভৈরব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ চালান। এ সময় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ভৈরব হাইওয়ে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশগুলোর প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক জানান, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে হাইওয়ে পুলিশের দুটি টিম কাজ করছে।