বিএনপি এখন ভারত-বন্দনা শুরু করেছে : সেতুমন্ত্রী
ভারতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক দেখে, বিএনপি এখন ভারত-বন্দনা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত-ভীতি থেকে সরে এসে, নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ভারত-প্রীতি দেখানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দলটি এখন বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে, তাতে কোনো লাভ হবে না। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে সব ষড়যন্ত্রকারী ভেসে যাবে।’
সকাল ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফের পরিচালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু থাকলে আপনাদের ক্ষমতা কি সংকুচিত হতো? দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু থাকলে ছাত্র নেতারা খারাপ কাজে জড়িত থাকত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের এ সম্পর্কে আরো বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু থাকলে ছাত্রনেতারা এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কোনো খারাপ কাজে জড়িত হতো না, ভালো কাজে জড়িত থাকত। কেননা যে খারাপ কাজে জড়িত থাকত তাকে কোনো শিক্ষার্থী নেতা নির্বাচিত করত না।
‘বিগত ২৫ বছর ডাকসুতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ৫০ জন নেতা নির্বাচিত করতে পারিনি। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতেও একই অবস্থা বিদ্যমান। সময় এসেছে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার।’ বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ছাত্র রাজনীতিতে নাক গলান। এতে অনেক শিক্ষক ছাত্রদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
‘ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন’ উল্লেখ করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘কিন্তু আজ এ সংগঠনের ঐতিহ্য কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছি তা আমাদের আত্মোপলব্ধি করতে হবে। আগের সেই সুনাম কি ধরে রাখতে পেরেছি আমরা? তা ভাবতে হবে। আজকাল সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের আচরণ এখনো এনালগ রয়েছে। আমাদের আচরণের আদর্শ হবেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “রাজনীতিতে বিদায় বলতে কিছু নেই। আজ তোমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিয়েছ। তাতে কিছু আসে যায় না। তোমাদের বয়স থাকলে তোমরা কেন্দ্রের নেতা হবে। আগামীতে তোমরা এমপি, মন্ত্রী হবে। আমার চেয়ে বড় নেতা হবে। তাই রাজনীতিতে ‘কাভি আলবিদা না কেহে না’ বলতে কিছু নেই।”
সম্মেলনের উদ্বোধন করে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘আমরা কোনো নেতাকে পদবঞ্চিত করব না। আবার সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত করতে পারব না। যারা মেধাবী, পরিশ্রমী এবং বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে নেতৃত্বে তারাই এগিয়ে থাকবে।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকেই অমুক-তমুক সিন্ডিকেটের কথা বলে থাকে। অনেক মিডিয়ায়ও এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয়। আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই, আমাদের সিন্ডিকেট হচ্ছে একটাই। আর সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনার সিন্ডিকেট।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে মেহেদী হাসান মোল্লা বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক মিলে শাখাটাকে ভালো করে চালানোর চেষ্টা করেছি। তবে সব কিছু সঠিক মতো করা সব সময় সম্ভব হয় না। আপনাদের চাওয়া অনুযায়ী আমরা কিছু দিকে পারিনি, এজন্য বিদায় বেলায় আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমার মোস্তাক, হাসান তারেক, কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক সাইফুর রহমার সোহাগ প্রমুখ।