সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে বোরো ফসল প্লাবিত
সুনামগঞ্জে গত তিনদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ১১ উপজেলার সবকটি হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো ফসল। একমাত্র ফসল পানির নিচে ডুবে থাকায় শঙ্কার মধ্যে দিন কাটছে কৃষকদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে জেলার নয় উপজেলার ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওর, দিরাই উপজেলার তুফানখালী হাওর, বারাম হাওর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর, ধর্মপাশার চন্দ্রর হাওর, মেঘনা হাওর, ঘুরমার হাওর, ছাতক উপজেলার জল্লার হাওর, জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওর, দোয়ারাবাজারের বন্দেহারী বিল, তাহিরপুর ও শাল্লা উপজেলার বেশ কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ ভেঙে গিয়ে ফসল তলিয়ে গেছে।
এদিকে, দিরাই উপজেলার তাড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাওর পরিদর্শন করতে গেলে তিনি বারাম হাওরের কৃষকদের তোপের মুখে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। কৃষকদের অভিযোগ, বারাম হাওরে বাঁধরক্ষায় ইউপি চেয়ারম্যান অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সময়ে যেখানে হাওরগুলোতে ৫ সেন্টিমিটার পানি থাকার কথা, সেখানে ৬ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার পানি আছে। হাওরে পানি স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমেদ মুক্তা আজ শনিবার তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘…আজ ভোরে নলুয়ার হাওরের শালিকা ও ডোমখালী বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে নলুয়ার হাওরে। গতকাল রাতে নারিকেলতলা, ইছগাঁও বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল। মইয়ার হাওরের ফসল রক্ষার দুর্বল বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। সুরিয়া বিবিয়ানা হাওরে জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম কাঙ্ক্ষিত ফসল।’
মুক্তাদীর আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘পাউবোর মাধ্যমে ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙা বন্ধকরণের নামে ঠিকাদার ও পিআইসির মাধ্যমে কাজ করার কথা। কিন্তু যথাযথ তদারকি, সময়মতো কাজ না করা আর সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে তলিয়ে গেল মানুষের স্বপ্ন। কে নেবে এই দায়ভার? যে স্পট দিয়ে হাওরে পানি ঢুকেছে, সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রায় ১৫ দিন আগে পাউবো কর্মকর্তাদের মানসম্পন্ন কাজ না হওয়ার কথা অবগত করলেও কর্ণপাত করা হয়নি। এই স্পটগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে তা গণমাধ্যমে একাধিকবার বলার পরেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। অতিবৃষ্টির প্রথম ধাক্কাটা সামলাতে পারল না এত দুর্বল বাঁধ কী করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেল তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ এনে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, কারা সাব-কন্ট্রাক্টের নামে মধ্যস্বত্বভোগী সেজে এবং কোন কোন পিআইসির গাফিলতির কারণে মানুষকে এই দুর্যোগে ঠেলে দেওয়া হলো তা অনুসন্ধান প্রয়োজন। বারবার স্থানীয় প্রশাসন বলার পরও এদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে পারে না। এদের খুঁটির জোর কোথায়?’
যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফসল রক্ষাবাঁধগুলোতে ঠিকমতো কাজ না হওয়ায় এখন জেলার সবগুলো হাওরের বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। তারপরও আমরা সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে হাওরে বাঁধরক্ষায় সর্বশেষ চেষ্টা করছি।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাওরে অবস্থানরত কৃষকদের চিঁড়া, মুড়ি ও গুড় দিয়েছি।’