সন্তান ভূমিষ্ঠ নাটোরে, বাবা রাজ্জাক ‘বন্দী’ মিয়ানমারে
সারা বিশ্ব আজ রোববার পরম মমতায় পালন করছে বাবা দিবস। এই দিবসেই বাবা হলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাক। আজই ছেলেসন্তানের বাবা হয়েছেন, তবে খবরটি তিনি জানেন না। কারণ তিনি মিয়ানমারের বাহিনীর হাতে ‘বন্দী’।
দুর্ভাগা রাজ্জাকের বাবা তোফাজ্জল হোসেনও। তাঁর বাড়িজুড়ে আনন্দ কী হবে, যেন রাজ্জাকের কারণে বাড়িতে শোকের মাতম। তোফাজ্জল সাংবাদিকদের কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘পুরো বাড়ির সবাই কেবলই কাঁদছে। আমি কারো কান্না থামাতে পারছি না।’
নবজাতকের মুখ দেখা তো দূরের কথা, মিয়ানমারে আটক নায়েক রাজ্জাককে বাংলাদেশ কবে ফিরে পাবে তা এখনো অনিশ্চিত।
আনন্দ ও খুশির পরিবর্তে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বলিয়াবাড়ি গ্রামে রাজ্জাকের বাড়িতে কেবলই কান্নার শব্দ। ওই বাড়িতেই আজ দুপুরে তাঁর স্ত্রী আসমা বেগম এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। রাজ্জাক ও আসমা দম্পতির আরো দুই সন্তান আছে। এদের একজনের নাম রাকিবুল (১৩) ও অন্যজন রিতু (১০)।
গত বুধবার কক্সবাজারের নাফ নদী থেকে বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। পাঁচদিন পরেও রাজ্জাককে ফেরত দেয়নি বিজিপি।
রাজ্জাকের বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাজ্জাকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। এরপর আর কথা হয়নি। বুধবার শুনেছি সীমান্তে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ছেলে অন্য বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। দুই দিন পরে টিভিতে, ইন্টারনেটে আমরা বিষয়টি দেখেছি। আমাদের তো বলা হয়েছে, রাজ্জাক সুস্থ আছে। কিন্তু সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন আমার ছেলেটাকে যেন সুস্থভাবে ফেরত চাই। বাড়ির সবাই মিলে কান্নাকাটি করছে।’
রাজ্জাকের মা বুলবুলি বেগমের কান্না কেউ থামাতে পারছে না। ছেলে রাজ্জাকের খবর পাওয়ার পর থেকে ক্রমাগত কেঁদে যাচ্ছেন তিনি। যেভাবেই হোক ছেলেকে ফেরত চান তিনি। কোনো কথা না বলে কেবল একটাই কথা বলছেন, ‘আমার ছেলে যেন বাড়ি ফিরে আসে।’
আবদুর রাজ্জাককে ফেরত চেয়ে গতকাল শনিবারও মিয়ানমারের কাছে অনুরোধ করে বাংলাদেশ সরকার। বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সফিউর রহমান সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং রাজ্জাককে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশের অনুরোধ তাঁর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
তবে আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে মিয়ানমার সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগ আনা হতে পারে বলে জানা গেছে।