ছিটমহলে ৬ জুলাই যৌথ জরিপ শুরু
বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলগুলোতে ১০ দিনের জরিপ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে বসবাসকারীদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।
অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতেও একইভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছিটমহলগুলো পুরোপুরি হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তার এ কাজ চলবে।
আজ বৃহস্পতিবার ভারতের চ্যাংরাবান্ধা বিএসএফ ক্যাম্পে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত দুই দেশের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
সকাল ১১টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ। তাঁর সাথে ছিলেন লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ভূমি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে ভারতের পক্ষেও বিএসএফ এবং দেশটির ভূমি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নেতৃত্বে দেন কোচবিহারের জেলা শাসক (ডিএম) পি উল্গানাথন। এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার সন্দীপ মিত্র ও কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশর সহকারী হাইকমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ বৈঠক থেকে ফিরে রাতে এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘বৈঠকে যৌথ মাঠ পরিদর্শন দল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। গঠিত দলটি আগামী ৬ থেকে ১৬ জুলাই দুই দেশের ছিটমহলগুলোতে জরিপ কাজ পরিচালনা করবে। বৈঠকে দুই দেশের জরিপকারী ও সুপারভাইজারদের তালিকা বিনিময় হয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার সন্দীপ মিত্র মোবাইল ফোনে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছিটমহলের সর্বশেষ অবস্থা এবং এগুলোর বাসিন্দারা কে কোন দেশে যেতে চায় তা নির্ধারণেই মূলত জরিপ পরিচালিত হবে। এ ছাড়া সাময়িকভাবে ছিটমহলবাসীর নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠক সূত্র মতে, উভয় দেশে জরিপ পরিচালনার জন্য মোট ৭৫টি জরিপ দল গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলে জরিপ কাজ চালাবে ভারত থেকে আসা ৫০টি দল। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাবে ২৫টি দল। জরিপকারীদের সাথে সুপারভাইজাররাও থাকবেন।
এ ছাড়া উভয় দেশের অপর যৌথদল জরিপ পর্যবেক্ষণ করবেন। জরিপ দলগুলো লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে যাতায়াত করবে। এর আগে আগামী ২ জুলাই বুড়িমারীতে আবারও দুই দেশের কর্মর্তাদের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জরিপদলগুলো প্রতিটি ছিটমহলবাসীর বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, নীলফামারীর জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন ও পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, বিজিবি রংপুর অঞ্চলের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাফিউল আলম, লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার টি এম মুজাহিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার তবারক উল্ল্যাহ, লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমদ বজলুর রহমান হায়াতী, লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আক্তার হোসাইন আজাদ, ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ জে এম এরশাদ আহসান হাবীব, পাটগ্রামের ইউএনও নূর কুতুবুল আলম, ডিমলার ইউএনও রেজাউল করিম, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক জাহিদুল হক সরকার, রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও টেকনিক্যাল উপদেষ্টা ফাইজুল বারী।
অন্যদিকে ভারতের ১৭ সদস্যের দলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিএসএফের ডিআইজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সতান্তওয়াল ত্রিবেদি, কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার ইয়াদব, ভারতের অতিরিক্ত পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এস কে চক্রবর্তী, কলকাতার সহকারী ব্রাঞ্চ সেক্রেটারিয়েট রঞ্জন মণ্ডল, আন্ডার সেক্রেটারি (বিএম-৩) বিকাশ শ্রীবাস্তব, পশ্চিমবঙ্গের সেক্রেটারি (স্বরাষ্ট্র) অরুণ সেন, কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলা শাসক (সার্বিক) চিরঞ্জীব ঘোষ ও অতিরিক্ত জেলা শাসক (এল এন্ড এলআর) সঞ্জয় কুমার দাস, মেখলিগঞ্জ সাব ডিভিশনাল কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার ঝাঁ, মাথাভাঙ্গা সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তা রঞ্জন চক্রবর্তী, দিনহাটা সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তা কৃষ্ণভা ঘোষ, ভারতীয় জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সার্ভে) উল্লাস চক্রবর্তী, ছিটমহল উন্নয়ন কর্মকর্তা প্রদীপ্ত ভেক্তা, কোচবিহার ৩৫ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমানন্ডেট লেফটেন্যান্ট কর্নেল অমিত লাল তিরকী ও জলপাইগুড়ি ২২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমানন্ডেট লেফটেন্যান্ট কর্নেল অজয় লুথারা।