বান্দরবানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
বান্দরবানে গত সোমবার থেকে অব্যাহত বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পাহাড়ধসে এরই মধ্যে জেলা শহরে শিশু দুই ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরো তিনজন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জেলার চার উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্লাবিত হয়েছে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট।
আজ শুক্রবারও তৃতীয় দিনের মতো বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, কক্সবাজারসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যাদুর্গতদের সাহাযার্থে জেলায় ৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
আজ দুপুরে বান্দরবান জেলা সদরে বন্যাদুর্গত এবং পাহাড়ধসে পড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজাসহ পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী জানান, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি এবং সদর উপজেলায় বন্যায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে জেলায় ৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রশাসন কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসনের পক্ষে ৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণতৎপরতা শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট নিরসনে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।
পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা জানান, বন্যাদুর্গত পৌরবাসীকে আজ শুক্রবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। শনিবার পৌরসভার পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সরবরাহ করা হবে। বন্যাদুর্গতদের এবং পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক জানান, পাঁচদিন ধরে অব্যাহত বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতা মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে জেলা সদর, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। অনেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাতা মুহুরী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় লামা উপজেলা শহরের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান লামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াইনু মং চৌধুরী। তিনি বলেন, রাতে পানি সামান্য কমলেও সকালে আবারও বেড়ে গেছে। মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরো ঘরবাড়ি প্লাবিত হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, আজও বৃষ্টি হওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা। নাইক্ষ্যংছড়ি-কক্সবাজার সড়কের দোছড়ি এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বন্যার পানিতে বান্দরবান-কেরানীহাট-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের বরদুয়ারা, কলঘর এলাকাসহ আরো কয়েকটি স্থানের সড়ক পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় তিনদিন ধরে বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ধসে সড়কে মাটি জমে যাওয়ায় রুমা, থানচি উপজেলায়ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে।
পূরবী পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সড়কে পানি বাড়ছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে সড়কে পানি কমবে না। সড়ক যোগাযোগও চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।