চাঁদা না দেওয়ায় ডাকাতি, কিশোরীকে গণধর্ষণ!
চাঁদা না দেওয়ায় একদল যুবক যশোর শহরের একটি বাসায় ঢুকে ডাকাতি করেছে। তারা ওই বাসার এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। পরে এই বাসার গৃহকর্তার সাথে ওই কিশোরীর বিবস্ত্র ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ছাড়া বাসার গৃহকর্ত্রীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলেছে।
এই অভিযোগ করে গতকাল শনিবার যশোরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন ওই বাসার গৃহকর্ত্রী। এতে স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক স্পন্দনের ফটোসাংবাদিক ইলিয়াস সাজু বাদশাসহ আটজনকে আসামিরা করা হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার রাতেই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন শহরের আর এন রোড এলাকার তরিকুল ও বিল্লাল।
ঘটনার পর থেকে মামলার অন্য আসামি শহরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়া এলাকার ইব্রাহিম ওরফে টাক ইব্রাহিম, ফটোসাংবাদিক ইলিয়াস সাজু বাদশা, আর এন রোড এলাকার সাইদুল, লাকু বিশ্বাস, রানা ও সোহরাব পলাতক বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাস।
ওসি এনটিভি অনলাইনকে জানান, ওই কিশোরীকে পুলিশ পাহারায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে এখন মানসিকভাবে অনেকটাই বিধ্বস্ত। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ বলেন, গত শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজে সময় আসামিরা ওই বাসায় গিয়ে ডোর-বেল চাপে। গৃহকর্তার নয় বছরের একটি মেয়ে দরজা খুলে দেয়। এরপর তারা ঘরে ঢুকে প্রথমে গৃহকর্ত্রীর নগ্ন ছবি তুলে। তারপর তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে তাদের মধ্যে দুজন বাসায় আশ্রিতা ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে।
মামলায় গৃহকর্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘কয়েকদিন আগে এই চক্রটি আমার স্বামীর কাছে চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ায় শুক্রবার তারা এই পৈশাচিক ঘটনা ঘটায়। দুর্বৃত্তরা আলমারি খুলে ২৭ হাজার টাকা, তিনটি মুঠোফোনের সেট, আমার কানে থাকা সোনার ঝুমকা, নাক ফুল, আমার স্বামীর পাসপোর্ট ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ২৮ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে।'
ভুক্তভোগী গৃহকর্তা এনটিভি অনলাইনকে জানান, শুক্রবার তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে ডোর-বেল চাপার পর ভেতর থেকে পুরুষকণ্ঠ শুনে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি ছাড়া আর কোনো পুরুষ মানুষ ওই বাড়িতে থাকেন না। বাসার ভেতরে ঢুকে দেখতে পান, শহরের নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়া এলাকার ইব্রাহিম, একই এলাকার রানা, ইলিয়াস সাজু ওরফে বাদশাসহ আটজন তাঁর বাসায় অবস্থান করছে। এদের একজন তাঁকে চর মেরে সোফার ওপর বসিয়ে শরীর থেকে পাঞ্জাবি খুলে ফেলে। এরপর তাঁর বাসায় আশ্রিতা ওই কিশোরীকে নগ্ন করে তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকটা ছবি তোলে। এসব ঘটনা ফাঁস করলে ছবি সংবাদপত্র ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
গৃহকর্তা আরো জানান, অপমানে ওই কিশোরী ঘরে থাকা ফেয়ারনেস ক্রিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরই মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ওই কিশোরীর প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আলমগীর কবীর। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কিশোরীর শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে তা যশোর মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন এখনো আসেনি।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে আসামিদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাহবুব আলম লাবলু বলেন, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় তাঁদের এক কর্মীর নাম আসায় তাঁদের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে ওই ঘটনায় তাঁদের কর্মীর ন্যূনতম জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।