গাফফার চৌধুরীর পাশে মিশন, তবে দায় নেবে না
জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর আল্লাহর ৯৯ নাম সংক্রান্ত বক্তব্যের দায় মিশন নেবে না। তবে একই সাথে দাবি করেছে, গণমাধ্যমে গাফফার চৌধুরীর বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহর নাম প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন গাফফার চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ রোববার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি আব্দুল মোমেন টেলিফোনে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রথমত যে সংবাদটা প্রকাশিত হয়েছে সেটা খুব ডিসটরটেড। বিষয়টাকে বিভ্রান্তকরভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এক ধরনের অপসাংবাদিকতা করা হয়েছে। উনি (আব্দুল গাফফার চৌধুরী) যা বলেছেন তার উল্টোটা বোঝানো হয়েছে।’
‘উনি বলেছেন, অনেক কিছুই অ্যাডপশন (আত্মীকরণ) হয়। যেমন ধরুন, আরবিতে যে নামগুলো আছে সেগুলো কাফেরদের নাম ছিল। পরে ইসলাম এসে সেগুলো অ্যাডপ্ট করেছে। কিন্তু তখন এটা নিয়ে কেউ আপত্তি করেনি,’ যোগ করেন আব্দুল মোমেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি আরো বলেন, ‘বড় বড় দেব-দেবির নামে গডের নাম দিয়েছে। উনি এই প্রেক্ষিতটাই বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু দুই-একটা সংবাদমাধ্যম এই সংবাদটা টুইস্ট (বিকৃত) করেছে।’
গাফফার চৌধুরীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উনি বলেছেন, বাংলাদেশের অনেক লোক নামাজ পড়ে, দাড়ি রাখে। কিন্তু সেখানেও বিভিন্ন অফিসে ঘুষ না দিলে কাজ হয় না। যে লোকগুলো নামাজ পড়ে, সে লোকগুলোর তো সৎ হওয়া উচিত। কিন্তু এ বিষয়টার তো ব্যত্যয় ঘটছে। তারপর তিনি মানুষের নাম রাখার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু যেভাবে তাঁর বক্তব্য পরিবশন করা হয়েছে, সেটা একেবারেই টুইস্টেড। খুবই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এভাবে তাঁর বক্তব্য ছাপানো হয়েছে।’
শুক্রবার নিউইয়র্কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আব্দুল গাফফার চৌধুরী বক্তব্য দেওয়ার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গাফফার চৌধুরী বলছেন, ‘আরবি ভাষা, হাজার বছরের পুরনো ভাষা। আমরা বলি ইসলামিক ভাষা। এই ভাষাতেই কাফেররা কথা বলেছে। আজকে আরবি ভাষার যে সমস্ত শব্দ আমরা ব্যবহার করি, সবই কাফেরদের ব্যবহৃত ভাষা। তা আমরা বলি যে আমাদের নাম, আল্লাহর ৯৯ নাম। সবগুলাই কিন্তু এই কাফেরদের দেবতাদের ভাষা ছিল। আর রহমান, গাফফার, গফুর সবই তখনকার ব্যবহৃত নাম ছিল। এখন সেগুলো ইসলাম অ্যাডপ্ট করেছে।’
এই ভিডিও প্রকাশের পর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর সমালোচনা করে ও জবাব দিয়ে এরই মধ্যে ব্লগে লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। অনেক নিউজ পোর্টালও সংবাদ প্রকাশ করেছে।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করেছেন উল্লেখ করে তাঁর শাস্তি দাবি করেছে বিএনপিও। আজ রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করেন, গাফফার চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্যে সরকারের ইন্ধন থাকতে পারে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনের উপস্থিতিতে গাফফার চৌধুরী মহান আল্লাহর নাম ও সাহাবিদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। সে ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর যোগসূত্র তদন্ত করা দরকার।
এ প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এর সঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কোনো সম্পর্ক নেই। উনি (গাফফার চৌধুরী) একটা ব্যক্তিগত অপিনিয়ন (মত) দিয়েছেন। আলোচনাটা চলছিল বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেছেন। তবে এর দায়ভার বাংলাদেশ মিশন নেবে না।’
এ ঘটনায় হেফাজতে ইসলামও একটি বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।