বৃদ্ধাশ্রমে কাঁদছেন তরুণী, দেখতে আসে না কেউ!
মাহমুদা আক্তার। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী থাকছেন রাজধানীর উত্তরখানের মৈনারটেকে ‘আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম’-এ। তিন বছর আগে তাঁকে সেখানে রেখে যান মেজো ভাই। এরপর একদিনের জন্য পরিবারের কেউ দেখতে আসেননি। তিন বছর ধরেই সেখানে থাকছেন আর চোখের পানি ফেলছেন।
বৃদ্ধাশ্রমেই মাহমুদা কাটিয়েছেন অনেকগুলো ঈদ। বাবা-মা ও ভাইদের বদলে এখন সেখানে পেয়েছেন অনেক বৃদ্ধাকে। তাঁদের সঙ্গেই কাটছে তাঁর জীবন।
আজ শনিবার এনটিভি অনলাইনের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মাহমুদা আক্তারের। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘মেজো ভাই তিন বছর আগে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যান। এরপর একদিনের জন্যও কেউ আমাকে দেখতে আসেননি।’
‘বাধ্য হয়ে ঈদ করতে হয় এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা সবার সঙ্গে। ঈদ করতে ভালোই লাগে, তবে বাড়ির কথা অনেক বেশি মনে পড়ে। আরো বেশি খারাপ লাগে ভাইদের কথা মনে হলে।’
যেভাবে বৃদ্ধাশ্রমে মাহমুদা
বাবা-মা ও ভাইদের সঙ্গে মাহমুদা থাকতেন রাজধানীর মিরপুর এলাকায়। বাবা ছোট মুদি দোকানদার। আর পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি একমাত্র ছোট বোন। তাই ছোটবেলা থেকেই সবার অনেক আদরেই কাটছিল জীবন।
তিন বছর বয়সে টাইফয়েড হয় মাহমুদার। এতে দুটি পা পঙ্গু হয়ে যায়। এরপর জীবনে শুরু হয় কষ্টের অধ্যায়। পরিবারে আদরের বোন ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে সবার বোঝা। হাঁটতে পারেন না, তাই সব সময় কাটাতে হতো ঘরের মধ্যে শুয়ে-বসে।
এভাবেই বাড়িতে কেটে যায় মাহমুদার অনেক বছর। শেষে পরিবারের লোকজন তাঁকে নিয়ে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। ২০১৪ সাল থেকেই তিনি থাকছেন আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমে। বাবা-মা ও ভাইয়েরা থাকলেও কেউ তাঁকে দেখতে আসেন না।
আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দা সেলিনা শেলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মাহমুদাকে তাঁর পরিবারের লোকজনই এখানে অনেক অনুরোধ করে রেখে গেছেন। যদিও এটা একটা বৃদ্ধাশ্রম। তবে অসহায় মাহমুদার সামগ্রিক কথা চিন্তা করে তাঁকে এখানে রাখা হয়েছে।’
‘মাহমুদা এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তাই বাসায় রাখলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে বৃদ্ধাশ্রমে তাঁকে রাখা হয়েছে।’