দুপুরের খাবার পাবে হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ব্যাপক ফসলহানির পর স্থানীয় পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া রোধ ও নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাদের জন্য বিদ্যালয়ে দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যাতায়াতের জন্য নৌকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
দুটি মাধ্যমিক ও ২২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে ব্র্যাক। বিদ্যালয়গুলো ব্র্যাক পরিচালনা করে।
গতকাল বুধবার থেকে চালু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত। বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ২৯টি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের দত্তগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির সিলেট অঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির, জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষা কর্মসূচির এলাকা ব্যবস্থাপক মো. রিয়াজুল ইসলাম, দত্তগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মির্জা এম এ গালিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক কর্মকর্তারা জানান, হাওরের ফসলহানির পর কৃষক পরিবারের শিক্ষার্থীরা যাতে বিদ্যালয় থেকে ঝরে না পড়ে, সে জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলায় ব্র্যাক পরিচালিত দুটি মাধ্যমিক ও ২২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এ ছাড়া বর্ষায় হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২৯টি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্র্যাক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহের ছয়দিন শিক্ষার্থীদের খাবারের তালিকায় সবজি খিচুড়ি, ডিম-বিস্কুট, ডিম-খিচুড়ি, কলা-বিস্কুট, ডিম-খিচুড়ি ও কলা-বিস্কুট রয়েছে। ব্র্যাকের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাই এই খাবার তৈরি করে বিদ্যালয়ে সরবরাহ করবেন। এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছে।
দত্তগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্পিতা দাস, অনুরূপা দাস, জুমা আক্তার, প্রিয়াংকা দাস ও অনিন্দিতা দাস জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে এলাকার ১০টি গ্রামের শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। অনেকেই চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ নৌকায় পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসে। তাই দুপুরে বাড়িতে যাওয়া যায় না। এখন বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করায় তারা খুশি।
দত্তগ্রামের বাসিন্দা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক দীপক চন্দ্র দাস বলেন, ফসল হারানোর পর এই এলাকার কৃষকরা মহাসংকটে আছে। তাদের ঘরে খাবার নেই, এলাকায় কোনো কাজ নেই। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সকালে না খেয়ে স্কুলে আসে। এ অবস্থায় ব্র্যাকের এই উদ্যোগটি শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি নৌকার ব্যবস্থা করার উদ্যোগটিও প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।