৭০ বছর পর ‘জিন্নাহ’ স্কুলের নাম পরিবর্তন
প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৪৬ বছরেও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার একটি বিদ্যালয় টিকে ছিল পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে। জামালগঞ্জের সেই ‘জিন্নাহ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি এখন থেকে ‘রূপাবালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে চলবে।
স্থানীয় লোকজনের দাবির মুখে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টি থেকে জিন্নাহর নাম মুছে দিয়ে নতুন নামকরণ করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়নের রূপাবালী গ্রামের পাশে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সময় বিদ্যালয়টির নামকরণ নিয়ে পাশের দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। পরে স্কুলের জমিদাতা রূপাবালী গ্রামের আবদুর রাজ্জাক পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন।
দেশ স্বাধীনের পর বিভিন্ন সময় স্কুলটির নাম পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা দাবি তোলেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই দীর্ঘদিন পর স্কুলটির নাম পরিবর্তন করা হলো।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি আকবর হোসেন জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু সেটি পরিবর্তন করা হয়নি। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। এ সময় উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। এরপর নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে জামালগঞ্জের সদ্য বিদায়ী ইউএনও প্রসূন কুমার চক্রবর্তীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
আকবর হোসেন বলেন, বদলি হওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জে ইউএনও প্রসূন কুমার চক্রবর্তীর শেষ কর্মদিবস ছিল। সেই দিনই তিনি ওই বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের নির্দেশ দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ ব্রত তালুকদার বলেন, ‘আমাদেরও দাবি ছিল এই নাম পরিবর্তনের। অবশেষে সেটি হওয়ায় আমরা কলঙ্কমুক্ত হলাম। আমাদের এলাকার মানুষ অনেক আনন্দিত।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জামালগঞ্জের ইউএনও প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনে যারা বিরোধিতা করেছে এই স্বাধীন দেশে তাদের নামে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছি এবং সেটি করা হয়েছে।’