গ্রাম ভাসিয়ে এবার শহরে সুরমা
টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি উপচে এখন সুনামগঞ্জ শহরে ঢুকে পড়েছে। ফলে শহরেও মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।
শহরের কাজির পয়েন্ট, মধ্যবাজার, সাহেববাড়ি, উকিলপাড়া ও বড়পাড়া এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তায় পানি উঠেছে। এতে জনজীবন ও যানবাহন চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে আজ সোমবার সকালেও সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত অব্যহত আছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যদি সারাদিন বৃষ্টিপাত হয় তাহলে পুরো শহরে পানি উঠে যাবে।
এদিকে আগে থেকেই জেলার সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, শাল্লা, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার চার শতাধিক গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
আজ সোমবার সকালেও সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করে কয়েক ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অব্যাহত বন্যা পরিস্থিতির কারণে ১১ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি। এতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা চালালেও বন্যা দূর্গতদের মাঝে এখনো কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আঙ্গুলিয়া গ্রামের সুচিত্রা বর্মণ জানান, চারদিন ধরে তাঁর ঘরে হাঁটুপানি। একই ঘরেই স্বামী-সন্তান ও গবাদি পশু নিয়ে কোনো মতে টিকে আছেন। কিন্তু কারো কাছ থেকে তিনি কোনো সহায়তা পাননি।
একই গ্রামের আরেক গৃহবধূ রেখা বর্মণ জানান, ঘরে খিদার জ্বালায় শিশু কাঁদছে কিন্তু তাদের মুখে কোনো খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। চুলা পানির নিচে থাকায় আগুনও ধরাতে পারছেন না।
আঙ্গুলিয়া গ্রামেরই নৌকার মাঝি নীপেন্দ্র বর্মণ জানান, ঘরে হাঁটুপানিতে রাত্রিযাপন করতে হয়। পাহাড়ি ঢলে সাপ-জোঁক ঘরে ঢুকে যায়, তাই শিশুসন্তান নিয়ে আতঙ্কে রাত পার করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মানুষের এই খারাপ অবস্থার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা উচিত। কিন্তু আশপাশের কোনো গ্রামে আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়নি।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা সব জায়গায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের ইউএনওরা ক্ষতিগ্রস্তদের এলাকায় এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দিচ্ছে। আমি নিজেও এখন বিশ্বম্ভরপুরে আছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরো জানান, আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তারা সবাই যার যার অবস্থানে থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নাই। তবে আজকে কিছুটা পানি কমতে শুরু করেছে। এখনো কোথাও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা দরকার হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।