‘এমপি ফকিরের গুণ্ডাদের’ কোপে কেন্দ্রীয় আ. লীগ নেতা আহত
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক মোরশেদুজ্জামান সেলিমকে কুপিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। হাসপাতালে ভর্তি ওই নেতার অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান ফকিরের ‘গুণ্ডারা’ তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছে। আর ফকির বলছেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডারা কোপাইতে পারে।’urgentPhoto
গতকাল রোববার রাত সোয়া ৯টায় হামলার ঘটনাটি ঘটে। এ সময় একটি দোকানে ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঘটনার পর মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গৌরীপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুককে গতকাল রাতে আটক করেছে পুলিশ। তবে অভিযোগ না পাওয়ায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে আজ সকালে এনটিভি অনলাইনকে জানান গৌরীপুর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।
এই হামলার জন্য গৌরীপুরের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) মুজিবুর রহমান ফকিরকে দায়ী করেছেন আহত মোরশেদুজ্জামান সেলিম। তিনি জানান, রোববার শহরের ধানমহাল এলাকায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিজামুদ্দিন বাবুলের বাসায় রাজনৈতিক সহকর্মী বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির এমপির টাকায় কেনা ভাড়াটে গুণ্ডারা তাঁর ওপর হামলা চালায়। তারা বেধড়ক মারপিট করে এবং রামদা দিয়ে কোপ দিলে তিনি গুরুতর আহত হন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক মোরশেদুজ্জামান সেলিম এনটিভিকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রনেতা বাবুলের বাসায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আমাদের কাছে ৭টার মধ্যে একটা মেসেজ আসছে, ক্যাপ্টেন মুজিব সাহেবের নির্দেশ আমাদের ওপর আক্রমণ করার জন্য। উনি নির্দেশ দিছেন ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতাকর্মী, তাঁর সাথে যারা আওয়ামী লীগ করে তাদেরকে। ওই গ্রুপটা যখন ডিনাই (প্রত্যাখ্যান) করল, আসল না, তখন সে আরেকটা গ্রুপকে সে অফার করল আমাদের ওপর আক্রমণ করার জন্য। তখন ওই গ্রুপটাও আসতে সম্মত হয় নাই, তারপর সে বিভিন্নভাবে- হিরোঞ্চিখোর (মাদকসেবী) মানে যারা আমাদের দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, তাদেরকে টাকার অফার দেয় আমাদের ওপর আক্রমণ করার জন্য। এরপর আনুমানিক ৯টার দিকে যখন বিদ্যুৎটা চলে গেল, তার দুই মিনিটের মধ্যেই আমাদের ওপর ডা. মুজিব তাঁর বাহিনী লেলিয়ে দিলেন।’
হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় মোরশেদুজ্জামান সেলিমকে প্রথমে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক কামনাশীষ রায় জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত সেলিমের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই। মমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোরশেদুজ্জামান সেলিমের তলপেটে রামদা দিয়ে কোপ দিয়েছে দুর্বত্তরা। এর মধ্যে একটি গভীর ক্ষত সেলিমের কিডনির কাছ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আহত সেলিম আরো অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় ও পরে তিনি বারবার স্থানীয় এমপিকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নাই। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে ফোন দিলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
পরে পুলিশ সুপার মইনুল হককে ফোন দিলে তাঁর নির্দেশে গৌরীপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আকতারুজ্জামান ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেলিমকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান বলে সেলিম জানান।
অভিযোগের ব্যাপারে গৌরীপুরের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান ফকির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যারা নৌকায় নির্বাচন করে নাই, তাঁদেরকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডারা কোপাইতেছে। তার মধ্যে উনি থাকতে পারেন।’
এরপর ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়টি জানতে প্রশ্ন করা হলে ফকির ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেদককে গালাগাল শুরু করেন।