সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে সংস্কৃতিকর্মীর মৃত্যু
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় মুখ রবিউল হাসান সাজু (৪৩)। এলাকায় শিশু থেকে বৃদ্ধ, উচ্চ শিক্ষিত থেকে নিরক্ষর সবার প্রিয় ছিলেন এ সংস্কৃতিকর্মী, সমাজকর্মী ও ‘কালীগঞ্জের কম্পিউটারের জনক।’
গতকাল রোববার রাতে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান রবিউল। অভিযোগ ওঠেছে, ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে রবিউল মারা গেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রবিউলের স্বজনরা জানান, অসুস্থ হয়ে গেলে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রবিউলকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।
ঘণ্টাখানেক পর জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সুকান্ত সাহা সেখানে উপস্থিত হয়ে সাজুকে ভর্তি করে নেন। ততক্ষণে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু অক্সিজেন দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। যথাযথ উপকরণ না থাকায় সরু পাইপের সাহায্যে কোনো রকমে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এতে রবিউলের অবস্থার আরো অবনতি হলে তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন সুকান্ত সাহা।
কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও কোনো চালক ছিল না। বিকল্প হিসেবে অন্য গাড়ি খুঁজতে হয় রবিউলের স্বজনদের। একপর্যায়ে রবিউল মারা যান।
এ সময় রবিউলের পাশে থাকা কলেজ শিক্ষক মসিউর রহমান বিপ্লবসহ কয়েকজন জানান, রাতে সাজুকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে একজন চিকিৎসককেও পাওয়া যায়নি। পরে অনেক কষ্টে ডা. সুকান্ত সাহাকে ডেকে আনা হয়।
কালীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, কেবল অব্যবস্থাপনার জন্যই রবিউল অকালে মারা গেছেন।
এ ব্যাপারে চিকিৎসক সুকান্ত সাহা বলেন, চিকিৎসকরা ছুটিতে থাকায় আমাকে একা গোটা হাসপাতাল সামলাতে হয়েছে। এরপরও আমি অবহেলা করিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে আছেন ১০ জন চিকিৎসক। তবে চিকিৎসকদের আটজনই আছেন ঈদের ছুটিতে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ মো. হুমায়ুন কবির কোনো মন্তব্য করেননি।
এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচার এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা দূর করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ সোমবার দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ মো. হুমায়ুন কবিরকে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ রবিউলের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন।
দুই সন্তানের জনক রবিউল হাসান সাজু কালীগঞ্জ বাজারে কম্পিউটারের দোকান পরিচালনা করতেন।
রবিউল হাসান সাজুকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার পর সেখান থেকে বের হয় শোক র্যালি। পরে র্যালিটি কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে মানববন্ধনে পরিণত হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত পথসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রভাষক মশিউর রহমান বিপ্লব, রেফাজ রাঙ্গা, হারুনুর রশিদ, সাংবাদিক হায়দার আলী বাবু প্রমুখ।