অবশেষে হত্যা মামলায় এমপি আমানুরের বিচার শুরু
অবশেষে টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া বিচার শুরুর আদেশ দেন। তিনি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৮ অক্টোবর দিন রেখেছেন। এর আগে আদালত আসামিপক্ষের আইজীবীর মামলা পুনঃতদন্ত ও ডিসচার্জের পৃথক দুটি আবেদন খারিজ করে দেন।
এর আগে আটবার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ঠিক করা হলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির হননি সংসদ সদস্য রানা। অবশেষে আজ সকাল ৯টায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সংসদ সদস্য রানাকে কঠোর নিরাপত্তায় আদালতে আনা হয়।
এদিকে, মামলার প্রধান আসামি সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ তাঁদের চার ভাইয়ের বিচার দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শুনানি শেষে বাদীপক্ষের আইনজীবী এস আকবর খান সাংবাদিকদের জানান, আসামিপক্ষের দুটি আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। তবে কারাগারে সংসদ সদস্য রানার সুচিকিৎসার আবেদনটি গ্রহণ করেন আদালত। দুপুর ১২টার দিকে সংসদ সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মামলার বাদী ও নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বিচার শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
গত নভেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি সংসদ সদস্যের অসুস্থতার কারণে আটবার পিছিয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৩ আগস্ট আমানুরকে বিচারিক আদালতে হাজির করার আদেশ দেন আপিল বিভাগ। মামলার তারিখে আমানুরকে আদালতে হাজির করা হয় না জানিয়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ আসে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফারুক হত্যা মামলাটি বিচারাধীন। এ আদালতেই গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জানা যায়, সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা আদালতকে জানান, পাইলসের রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় আমানুর ভ্রমণ-উপযোগী নন বলে কারাগারের সহকারী সার্জন জানিয়েছেন। তাই তাঁকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগের তারিখ ১২ জুন জানানো হয়, জ্বর, বমি, পাতলা পায়খানা, কোমর ব্যথা ও হৃদরোগের ব্যথার কারণে আমানুর ভ্রমণ-উপযোগী নন।
গত বছরের ৯ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির প্রথম তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু এর আগের দিন কাশিমপুর কারাগার থেকে তাঁকে বুকে ব্যথাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তাই তাঁকে ওই তারিখে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি। উচ্চ রক্তচাপ, বুক ও কোমরের ব্যথার কারণে আমানুর গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি প্রায় তিন মাস ঢাকা মেডিকেলের কেবিনে ছিলেন। এরপর তাঁকে আবার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় অভিযোগ গঠনের শুনানি তিনবার পেছায়।
এ অবস্থায় মামলার বাদী ও নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ অভিযোগ করেন, আমানুর প্রভাব খাটিয়ে কখনো হাসপাতাল, কখনো কারাগারের চিকিৎসাকেন্দ্রে থেকে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ টাঙ্গাইলে তাঁর কলেজপাড়া এলাকায় বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। প্রথমে থানা-পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত করে। ২০১৪ সালের আগস্টে এ মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন।
আদালতে তাঁদের স্বীকারোক্তিতে সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তাঁর তিন ভাইয়ের এ হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান।
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আমানুর ও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।