দোয়ারাবাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত, আহত ৫০
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া এলাকায় পূর্ববিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন দোহালিয়া ইউনিয়নের মৃত ওমর আলীর ছেলে শেরুজ্জামান ও বেরীগাঁও গ্রামের মৃত ফয়জুর রহমানের ছেলে এবাদুল হক।
গুরুতর আহতদের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ সাতটি রাবার বুলেট ছুড়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রমজান মাসে দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার মিয়া আনুর ইফতার মাহফিল থেকে ফেরার পথে পূর্ববিরোধের জের ধরে গোরসপুরের আরজ আলী ও তাঁর আত্মীয়-স্বজন মিলে একই ইউনিয়নের বেরীগাঁওয়ের কাওছার মিয়াকে মারধর করেন। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন কাওছার মিয়া। এ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা চলছিল। আজ বেলা ১১টায় ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের পাশের সড়কে কাওছার, তাঁর বড় ভাই মাসুক মিয়া, ভাতিজাসহ কয়েকজন শেরুজ্জামানের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন। এ খবর শেরুজ্জামানের আত্মীয়দের কাছে পৌঁছালে তারাও মাসুক মিয়ার বেরীগাঁও গ্রামে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে মাসুক মিয়ার চাচাতো ভাই এবাদুল হকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শেরুজ্জামানের মৃত্যু হয়। একইভাবে ছাতক উপজেলা কমপ্লেক্সে এবাদুল হকের মৃত্যু হয়। আহতদের ছাতক উপজেলা কমপ্লেক্সে ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহতদের কয়েকজন ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছবি : এনটিভি
দোহালিয়া বাজারের দোকান মালিক কাজী শাহিদুল ইসলাম জানান, মাসুক মিয়ার আপন ছোট ভাই কাউছারকে শেরুজ্জামানের লোকজন মেরে আহত করায় দীর্ঘদিন ধরে শেরুজ্জামান ও মাসুক মিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ ঘটনায় থানায় মামলাও করা হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলাপও করা হচ্ছিল। কিন্তু আজকে সকালে মাসুক মিয়ার লোকজন শেরুজ্জামানের ওপর হামলা চালালে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে আহত ৫০ জনের মধ্যে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন দোহালিয়া ইউনিয়নের বেরীগাঁও গ্রামের আবদুল কাহার (৫০), সামছুদ্দোহা (৬০), মুজিবুল হক (৪০), আবুল খায়ের (৫৩), আবদুল হামিদ (৩৪), জাকির হোসেন (১৮), সৈয়দ আলী (১৮) ইমরান হোসেন (২০), এখলাস আলী (২৫), আল শাহীন (১৮) রাজ্জাক হোসেন (১৯), চমক আলী (৬৫) ও সুবের মিয়া (৩০)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, পূর্ববিরোধের জের ধরে দুই পক্ষ মুখোমুখি ছিল। আজ সকালে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষ থামাতে সাত রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক শেরুজ্জামানের ভাই শাওন মিয়া ও তাঁর আরেক আত্মীয় রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।