চুরির অভিযোগে দুই মজুরকে গাছে বেঁধে পিটুনি
মুদি দোকানে চুরি করার অভিযোগে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় শিশুসহ দুজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়েছে। গত ৩১ জুলাই ওই চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর ২ আগস্ট রোববার স্থানীয় প্রভাবশালীদের সিদ্ধান্তে দুজনকে এ শাস্তি দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে দৃশ্যটি ছড়িয়ে পড়ে।
urgentPhoto
বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নে দক্ষিণ মালিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আহত হন শাকিল ও আবু সামা। পেশায় দুজনই দিনমজুর। এর মধ্যে শাকিলের বয়স ১৩। উভয়েই এ গ্রামেরই বাসিন্দা।
ভিডিওতে যা আছে
মুঠোফোনে ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা যায় শাকিল ও সামাকে সুপারি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। দুজনই লুঙ্গি পরা। সামার শরীরে লুঙ্গি ছাড়া কিছু নেই। আর শাকিলের গায়ে গেঞ্জি। গাছের ডাল দিয়ে দুজনকে পেটাচ্ছেন সবুজ গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরা এক দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি দুজনকে মারছেন আর বলছেন- ‘স্বীকার কর, স্বীকার কর।’ বুক বরাবর আঘাত করছিলেন ওই ব্যক্তি। পাশে দাঁড়ানো হলুদ গেঞ্জি পরিহিত অন্য এক দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তি নির্দেশ দেন নিচের দিকে মারার জন্য। এরপর কোমরের নিচে বেত দিয়ে পেটানো হয় ওই দুজনকে। এ সময় সামা আকাশের দিকে তাঁকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘বিনা অপরাধে আমারে মারতাছে। তুমি এর বিচার করো আল্লাহ।’ আর মারের তীব্রতায় কুঁকড়ে যাওয়া শিশু শাকিল কেবলই চিৎকার করে কাঁদছিল।
গতকালই মুঠোফোনে ধারণ করা ওই দৃশ্য বিভিন্ন মুঠোফোনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে মুদি দোকানের মালিক বুলবুল বলেন, ‘গ্রাম্য সিদ্ধান্ত অনুসারে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগ পায়নি পুলিশ
এদিকে নাটোরের বড়াইগ্রামে চুরির অভিযোগে দুই দিনমজুরকে গাছের সাথে বেঁধে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক কিংবা কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। এখনো এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
পরিদর্শনের সময় পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি বলেন, ‘আইন হাতে তুলে নেওয়া একটি অপরাধ।’
হুমকির অভিযোগ
আজ বুধবার ঘটনাস্থল গিয়ে দেখা যায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে মালিপাড়ায়। সামা ও শাকিবের পরিবারের লোকজন জানায়, যারা এ সাজা দিয়েছে তাদের হুমকির কারণে থানা ও হাসপাতাল কোথাও যেতে পারেনি তারা। নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে শিশু শাকিলকে। আবু সামাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায় তার বোন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছে নির্যাতিতদের পরিবার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন জানিয়েছে, গ্রামের প্রভাবশালী সৌদী প্রবাসী রবিউল করিম ও স্থানীয় মাতব্বরদের নির্দেশে দিনমজুর শাকিল ও আবু সামাকে ধরে দোকানের সামনে সুপারি গাছের সাথে বেঁধে পেটায় গ্রামের কয়েকজন।
এ ব্যাপারে মাঝগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ওই দুজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। ওদের গায়ে মারধরের দাগ দেখেছি।’