প্রথম স্ত্রীর পর দ্বিতীয় স্ত্রীকেও হত্যা!
যৌতুকের দাবিতে প্রথম স্ত্রীকে হত্যার ছয় মাসের ব্যবধানে এবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার এক স্বামীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম মেহেদি হাসান আকন (২৫)। তাঁর বাড়ি বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর কলাগাছিয়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।
গত রোববার রাতে আমতলীর উত্তর কলাগাছিয়া গ্রামে মেহেদিদের বাড়ির পাশের একটি মুগ ডালের ক্ষেত থেকে মেহেদির দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনার (২৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আমেনার বাবা হানিফ হাওলাদার বাদী হয়ে সোমবার বিকেলে আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার ভিত্তিতে ওই দিনই গ্রেপ্তার করা হয় আসামি মেহেদি হাসানের বাবা আলমগীর আকন ও মা পিয়ারা বেগমকে।
আমতলী থানা পুলিশ, মামলার অভিযোগ এবং নিহতের পরিবারসূত্রে জানা গেছে, মেহেদি হাসান ও তাঁর বাবা আলমগীর আকন পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁরা বরিশাল শহরে ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তিতে কাজ করতেন। প্রথম স্ত্রী মনিরাকে হত্যার তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমতলী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হানিফ হাওলাদারের মেয়ে আমেনার সঙ্গে বিয়ে হয় মেহেদী হাসানের।
বিয়ের সময় আমেনার বাবা হানিফ হাওলাদার মেয়ের সংসারের সব মালামাল দিয়ে দেন। বিয়ের তিন মাসের মাথায় মেহেদি হাসান আমেনাকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে সোনার চেইন, কানের দুল এবং এক লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেন। এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় মেহেদি হাসান গত ৩১ ডিসেম্বর আমেনাকে মারধর করেন। মারধরের পরের দিন ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আমেনা তাঁর বাবার বাড়ি চলে যান।
এর মধ্যে মেহেদি তাঁর স্ত্রীর কোনে খোঁজ-খবর নেননি। তিন মাস ধরে বাবার বাড়িতে থাকার পর গত ৮ এপ্রিল রোববার দুপুরে মেহেদি হাসান ও তাঁর মামা ইসমাইল আমেনার বাবার বাড়ি উপস্থিত হয়ে আমেনাকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। এ সময় আমেনা এক বাক্যে তাঁদের সঙ্গে স্বামীর বাড়ি চলে যান। স্বামীর বাড়ি যাওয়ার ২২ ঘণ্টার ব্যবধানে পরের দিন সোমবার দুপুরে বাড়ির পাশের একটি মুগ ডাল ক্ষেতে আমেনার লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
আমেনা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শ্বশুর-শাশুড়ি। ছবি : এনটিভি
পুলিশ ও এলাকাবাসীর ধারণা, আমেনাকে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে তাঁর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন মেহেদী হাসান। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহতের লাশ উদ্ধারকারী আমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, নিহত আমেনার দুই ঠোটে, উরুতে, হাঁটুতে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল।
এর আগে মেহেদি হাসান কলাগাছিয়া গ্রামের মফিজ হাওলাদারের মেয়ে মনিরাকে বিয়ে করে বরিশালের রুপাতলী এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। বিয়ের পর মনিরা যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন ২০১৭ সালের ৬ জুন মনিরাকে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘরের আড়ার সঙ্গে তাঁর লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালান মেহেদি। সে সময় বরিশাল কোতোয়ালি থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পুলিশ সে সময় মেহেদিকে গ্রেপ্তার করলেও কয়েক দিনের মাথায় জামিনে ছাড়া পান তিনি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে এবং আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড এক সময় ধামাচাপা পড়ে যায়। পরে মেহেদির হুমকির মুখে মামলা করতেও সাহস পাননি মনিরার বাবা মফিজ হাওলাদার।
কলাগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা নীলিমা বেগম ও মনিমজান বেগম জানান, যৌতুকের মনিরাকে নির্মমভাবে হত্যা করলেও সুকৌশলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন মেহেদি হাসান। তারা আমেনা ও মনিরার হত্যাকারী মেহেদি ও তাঁর পরিবারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
আমেনার মা খাদিজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর ভাল মাইয়াডা আইট্টা স্বামীর বাড়ি গেল, হেই মাইয়াডা এহন লাশ অইয়া আমার কোলে ফেরত আইল। মুই এইডা ক্যামমে মাইনা নিমু।’
আমেনার ভাই আবু মুছা বলেন, ‘বুইনডায় মোর কি অপরাধ করছিল যে হ্যারে মাইরা হালাইতে অইবে। আমরা এইআর কঠিন বিচার চাই।’
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদ উল্যাহ বলেন, এ ঘটনায় নিহত আমেনার বাবা হানিফ হাওলাদার বাদী হয়ে আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ০৮/০৯-০৪-১৮। ধারণা করা হচ্ছে, আমেনাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ওসি আরো জানান, আমেনার স্বামী মেহেদি ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে মেহেদির বাবা আলমগীর আকন ও মা পিয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।