বেওয়ারিশ লাশটি রেলওয়ে কর্মকর্তার, স্বামী গ্রেপ্তার
একদিন আগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা নদী থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে মুসলিম রীতিতে দাফন করা হয় সুনামগঞ্জ শহরের মরাটিলায় কবরস্থানে।
পরে ২২ এপ্রিল সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া সিলেট রেলওয়ের ডাক বিভাগের কর্মকর্তা বৈশাখী ধর তৃপ্তির (২৭) পরিবার লাশের ছবি ও কাপড়-চোপড় দেখে পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় বৈশাখীর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৈশাখী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। তিনি সিলেট সদরের খাদিমনগর ইউনিয়নের বহরদাস পাড়ার বাসিন্দা পরিতোষ ধরের মেয়ে।
এর আগে বুধবার সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার খাদ্যগুদামের পাশের সুরমা নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে বৈশাখীর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় সেখানে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিচয় না পাওয়ায় বুধবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের মরাটিলা কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে দাফন সম্পন্ন করে।
আজ বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষ থেকে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সন্ধ্যায় লাশটি কবর থেকে উত্তোলন করে সিলেটে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ ও বৈশাখী ধরের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১০ মাস আগে সিলেট পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের সদর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক রিংকু চন্দ্র ধরের সঙ্গে বৈশাখীর বিয়ে হয়েছিল। বৈশাখী ধরের পরিবারের অভিযোগ, রিংকু চন্দ্র ধর পরকীয়ায় যুক্ত ছিলেন।
গত ২১ এপ্রিল এসব বিষয় নিয়ে বৈশাখীর সঙ্গে রিংকুর ঝগড়া হয়। বৈশাখী ওই দিন গভীর রাতে তাঁর বোন ও বোনের স্বামীর এবং তাঁর বাবার মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠান। তাতে লেখা ছিল, ‘ভোর ৬টার পর আমাকে এসে আর পাবে না তোমরা, আমি সকলকে ছেড়ে চলে যাব।’ তারা সঙ্গে সঙ্গে রিংকুকে ফোন দিলে তিনি তাদের জানান, দুজনের মধ্যে সামান্য ঝগড়া হয়েছিল, সেটি মিটমাট হয়ে গেছে। তারা বাসায় যেতে চাইলে রিংকু নিষেধ করেন। এরপর ভোর রাত থেকে বৈশাখীকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
বৈশাখী ধরের ফুপাতো ভাই রাশিন্দ্র চন্দ্র দে জানান, রিংকু ও বৈশাখী সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ভার্তখলা এলাকায় থাকতেন।
ওই বাসার ক্লোজ সার্কিট (সিসি টিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখা গেছে, বৈশাখী ২২ এপ্রিল ভোর ৫টা ৪৯ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, পরিতোষ ধরের সঙ্গে কথা বলে এবং মেয়েটির ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়ার পরই লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত বুধবার রাতে বৈশাখীকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বাবা পরিতোষ ধর বাদী হয়ে রিংকু ধরের বিরুদ্ধে সিলেটে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ বুধবার রাতেই রিংকুকে গ্রেপ্তার করে।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, রিংকু ধরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা করেছেন তাঁর বাবা। পরে পুলিশ রিংকুকে গ্রেপ্তার করে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি সুশীল চন্দ্র দাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল বুধবার সুরমা নদীতে লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী খবর দিলে আমরা লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। পরে কোনো পরিচয় না পেয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই। সেখানে ময়নাতদন্তের পর তার লাশ সুনামগঞ্জে দাফন করা হয়। পরে আমরা ওই নারীর লাশ ও তার হাতে থাকা শাখাসহ বাংলাদেশের সব থানা বিশেষ করে নদীর পাশের থানায় ছবি পাঠাই। আজ নিহত বৈশাখীর বাবা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আমাদের কাছে লাশ তোলার অনুমতি চাইলে আমরা লাশ তুলে তাদের পরিবারের কাছে দিয়েছি।’