‘এখন ঢাডা দেইখা ভয় পাই, বাইত চইলা যাই’
‘আগে বৃষ্টি বাদল হইলেও ধান কাটছি, ভয় পাইছি না। এখন ঢাডা পড়ে দেইখা ভয় পাই। বাইত চইলা যাই।’
সুনামগঞ্জের হাওরের এক কৃষক এসব কথা বলছিলেন। হাওরের বিশাল খোলা প্রান্তরে বোরো ধান কাটতে হয় কৃষকদের। আর এই সময়ই হয় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি। গত এক মাসে ২০ জন নিহত হয়েছেন বজ্রপাতে। নিহতরা কৃষক। কেউ যাচ্ছিলেন ধান কাটতে। কেউবা ধান কেটে ফিরছিলেন বাড়িতে।
অধিকাংশ সময় বজ্রপাত হলে নিরাপদস্থানে যাওয়ার আগেই বজ্রপাতের শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন কৃষকেরা।
তবুও মৃত্যুর ভয় নিয়েই কাজে নামতে হয় কৃষকদের।এক কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের।তিনি বলেন,‘আগে তো মনে করেন বৃষ্টি বাদল হইলেও আমরা ধান কাটছি,ভয় পাইছি না।এখন মনে করেন ঢাডা পড়ে দেইখা আমরা ভয় পাই। বাইত চইলা যাই।’
আরেক কৃষক বলেন,‘পেট বাচান লাগবো। ঢাডা দেক,তুফান দেক,আমরার মাঠে আওয়া লাগবো।কাজ করতে হইবো।’
তাই খোলা স্থানে আশ্রয়স্থল তৈরির দাবি জানিয়েছেন কয়েকজন কৃষক। যাতে বৃষ্টি নামলেই দ্রুত সেখানে গিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিতে পারেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.সাবিরুল ইসলাম বলেন,‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে বজ্রপাতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে।আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা যায়,মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জে। আর এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে।
স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়।এই গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন নাসার বিজ্ঞানী স্টিভ গডম্যান।
গবেষণায় বলা হয়,ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কঙ্গোর কিনমারা ডেমকেপ এলাকায়,মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে এবং জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো লেক এলাকায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। সারা বছরের হিসেবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে লেক মারাকাইবো এলাকায়। সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩২টির বেশি বজ্রপাত হয়।আর সুনামগঞ্জে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে।