মেয়েকে দিয়ে পতিতাবৃত্তি-নির্যাতন, মা সৎবাবা গ্রেপ্তার
বরগুনায় এক তরুণীকে (২৯) পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা ও নির্যাতন করার অভিযোগে তাঁর মা ও মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই তরুণীর করা মামলায় গতকাল সোমবার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া থেকে লাইলী বেগম (৪৫) ও তাঁর দ্বিতীয় স্বামী খালেক মোল্লাকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার বিবরণ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে গেছে, ওই তরুণীর বয়স যখন ১৯ মাস তখন পিতৃহারা হন তিনি। এরপর বিয়ে করেন মা। সেই সংসারে অবহেলায় বেড়ে ওঠেন তিনি। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া চললেও এক সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই তাকে জোর করে পতিতাবৃত্তির কাজে বাধ্য করা হয়।
শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন মা ও তাঁর দ্বিতীয় স্বামীর নির্দেশনায় দিন-রাত সব সময় তাঁকে পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত হতে হতো। রাজি না হলেই চলত নিষ্ঠুর নির্যাতন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এমন নির্মম নির্যাতনের একপর্যায়ে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে ওই তরুণী।
গর্ভপাত ঘটানোর জন্য বরগুনার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ওই তরুণীকে নিয়ে যান লাইলী ও খালেক মোল্লা। কিন্তু কোথাও গর্ভপাত করাতে না পেরে তাঁকে গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ান লাইলী। এর ফলে গর্ভের সাত মাসেই এক কন্যা শিশু প্রসব করেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। কিন্তু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুটির মুখে লবণ দিয়ে তাকে হত্যা করেন লাইলী ও খালেক মোল্লা। হত্যার পর তারা বাড়ির পাশের এক ঝোঁপের আড়ালে মৃত শিশুটিকে মাটি চাপা দেন।
এ ঘটনার তিনদিনের মাথায় আবারও ওই তরুণীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন তাঁর মা ও সৎবাবা।
সবশেষ গতকাল সোমবার রাতে আবারও পতিতাবৃত্তির কাজে বাধ্য করতে চাইলে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অপারগতা প্রকাশ করে মা ও সৎবাবার কাছে অনুনয়-বিনয় করেন ওই তরুণী। এ সময় তাঁর উপরে নির্মম নির্যাতন চালান লাইলী ও খালেক। নির্যাতনের একপর্যায়ে ওই তরুণীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে বরগুনা থানায় নিয়ে যায়। সেখানেই পুলিশকে সব খুলে বলেন তিনি।
বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী গত রাতে একটি মামলা করেন। পরে ওই রাতেই সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া থেকে অভিযুক্ত লাইলী বেগম ও তাঁর স্বামী খালেক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।