‘ভারত যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি’
লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক সময় হাতে পেলেন ভারতে যাওয়ার অস্থায়ী ভ্রমণ পাস ও পরিচয়পত্র। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী এলাকায় এক সময় ছিলেন ছিটমহলের বাসিন্দা। অস্থায়ী হলেও এসব কাগজ পাওয়ায় খুশি ধনেশ্বর বর্মণ (৪৫)। এ কাগজ দিয়ে এখন নিজ দেশ ভারতে যাবেন তিনি। ধনেশ্বর বললেন, ‘পরিবার নিয়ে ভারত যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’
বাংলাদেশ থেকে নিজ ভূখণ্ডে চূড়ান্তভাবে চলে যাওয়ার আগে প্রস্তুতিমূলক যাতায়াতের জন্য আজ সোমবার থেকে এসব বাসিন্দাদের হাতে ‘অস্থায়ী ভ্রমণ ও পরিচয়পত্র’ তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে ভারতীয় হাইকমিশন।
সকাল থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়। গত ৬ থেকে ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত যৌথ জরিপে যেসব ছিটমহলবাসী ভারতে ফিরে যাওয়ার জন্য নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছেন তাঁরাই পাচ্ছেন ওই পরিচয়পত্র। লালমনিরহাটের ১৯৫ জনসহ মোট ৯৮৭ জন মানুষের মধ্যে ওই পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে বলে ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে।
সকালে হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারীর অস্থায়ী ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, কার্যক্রম শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ক্যাম্পে এসে জড়ো হয়েছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার নারী ও পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। জড়ো হন উৎসুক মানুষ। পরে মাইক দিয়ে একে একে ডাকা হয় ভারতে যেতে ইচ্ছুক নিবন্ধিত ব্যক্তিদের নাম। মঞ্চে গিয়ে সই বা টিপসই দিয়ে সংগ্রহ করেন অস্থায়ী ভ্রমণ পাস ও পরিচয়পত্র।
অপরদিকে পাটগ্রামের জোংড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে স্থাপিত ক্যাম্পে গিয়েও দেখা গেছে একই দৃশ্য।
হাতীবান্ধার ধনেশ্বর বর্মণ অস্থায়ী ভ্রমণ পাস ও পরিচয়পত্র হাতে পেয়ে বলেন, ‘স্ত্রী কাজলী, ছেলে উপেন্দ্র (৬) আর মেয়ে ভূমিকাকে (৪) নিয়ে ভারত যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছি। আজ পরিচয়পত্রসহ সাময়িক ভ্রমণ পাস পেয়ে আমরা অনেক খুশি।’
বিপুল ও প্রিয়াংকা স্বামী স্ত্রী। এসেছিলেন অস্থায়ী ভ্রমণ পাস ও পরিচয়পত্র নিতে। বললেন, ‘নিজেদের মূল ভূখণ্ডে ফিরে যাওয়ার আনন্দটাই আলাদা।’
রাজশাহীতে ভারতীয় উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তা অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘যারা ভারতে যেতে নিবন্ধন করেছিলেন তাদের সাময়িকভাবে ভারতে ভ্রমণ পাসসহ পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা থাকলে আমরা আবারও আসব।’ সকাল ১০টায় শুরু হওয়া পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মঙ্গলবারও এ কার্যক্রম চলবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভারতীয় হাইকমিশন থেকে দেওয়া নির্দেশনাতে বলা হয়েছে, প্রদানকৃত ‘অস্থায়ী ভ্রমণ ও পরিচয়পত্রটি’ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এটি নিয়েই ১ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিচয়পত্রধারীদের ভারতে চলে যেতে হবে। এজন্য তাদের ব্যবহার করতে হবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী, বাগবন্দর-সাহেবগঞ্জ অথবা বুড়িমারী-চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্ট। তবে তার আগে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই ওই পাসের মাধ্যমে বাহকরা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনুসন্ধানমূলক সাময়িক ভ্রমণের জন্য একাধিবার ভারত গিয়ে ফিরে আসতে পারবেন। এজন্য তাঁদের ব্যবহার করতে হবে শুধু বুড়িমারী-চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্ট।
ওই পাস নিয়ে সাময়িকভাবে যারা ভারতে যাবেন তাঁদের গন্তব্যে যাওয়ার আগে দেশটির কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তার (এসডিও) কাছে প্রতিবেদন করতে হবে। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বিতরণ করা পরিচয়পত্রধারীদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিজেদের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি সংক্রান্ত টাকা-পয়সার লেনদেন শেষ করতে হবে। আর সদল বলে টাকা-পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান মালামালসহ চূড়ান্তভাবে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য পরিবহন ও অন্যান্য ব্যবস্থা করবে ভারতীয় হাইকমিশন। চূড়ান্ত যাত্রার তারিখ পরে জানানো হবে।