সুনামগঞ্জে বন্যায় প্লাবিত তিন শতাধিক গ্রাম
একটানা বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার সবগুলো উপজেলার তিন শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। অনেক ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
সদর উপজেলার সুরমা, গৌরারং ও রঙ্গারচর ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ শহরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এখনো তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, বড়পাড়া ও নবীনগর সড়ক পানির নিচে। তবে এ সব এলাকার ঘরবাড়িতে এখন পর্যন্ত বন্যার পানি ওঠেনি বলে জানা গেছে।
সুরমা ইউনিয়নের সদরগড় গ্রামের মো. শামীম জানান, বৃষ্টিপাত কম থাকার পরও পাহাড়ি ঢল এসে বসতঘরের আশপাশ ডুবিয়ে দিচ্ছে। গত চার-পাঁচ দিন পানিবন্দি হয়ে আছি। ঘরের মধ্যে পানি ওঠেনি কিন্তু চারপাশে পানি থাকার কারণে ঘরের ভেতরেই অসহায় অবস্থায় বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা মকব্বর হোসেন জানান, চারদিন ধরে এলাকায় পানি জমে আছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সাহায্য বা কোনো জনপ্রতিনিধি এদিকে আসেননি। সব জায়গায় বন্যার পানি থাকায় কাজকর্মহীন অবস্থায় কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্লাবিত হওয়া প্রসঙ্গে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারের শাহজাহান মাস্টার জানান, সুরমা ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চেলা নদী ও খাসিয়ামারা নদীর পাড়ের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে চলে গেছে। বন্যার পানিতে আমন বীজতলার খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পুকুরগুলোর সব মাছ ভেসে গেছে বলে জানান তিনি।
এ দিকে ছাতক-সিলেট সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বন্যার পানি আরো বাড়লে সিলেটের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ছাতক উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ জানান, ছাতক-সিলেট সড়কটিতে চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি পানি উঠে গেছে। পৌর-শহরের বেশির ভাগ জায়গায় পানি চলে এসেছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে আগাম বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নিয়ে সভা করা হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো রকমের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসনসহ সব ডিপার্টমেন্ট প্রস্তুত আছে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ইউএনওদের সব রকমের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে গেছে।’
সাবিরুল ইসলাম আরো জানান, এখনো কোথাও কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রয়োজন পড়েনি। এর ভেতরেই প্রত্যেক উপজেলার জন্য খাদ্য ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন যেখানে যা প্রয়োজন বরাদ্দ দেওয়া হবে।’