তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যানকে অপসারণ
বরগুনার তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়’ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার ওই প্রজ্ঞাপন বরগুনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছায় বলে জানা যায়।
জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন তালতলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান। একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখল ও নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ (উপজেলা-০১ শাখা) থেকে গত ৮ জুলাই তারিখে জারি করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (উপজেলা পরিষদ সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত এর ধারা ১৩ (১) (গ) অনুযায়ী অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সরকার জনস্বার্থে মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
এর আগে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সদ্য জারিকৃত প্রজ্ঞাপন ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, মনিরুজ্জামান মিন্টুর বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। তদন্তের নির্দেশ পেয়ে সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে স্থানীয় ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামান।
বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামানের তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৫টি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে তালতলীর ইউএনও কাজী তোফায়েল হোসেন, তালতলী থানার ওসি বাবু কমলেশ এবং উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল খালেক এবং বড়বগী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী মো. জসীম উদ্দিন মধুকে মারধরের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তালতলী সিনিয়র মাদ্রাসার দপ্তরি মো. শাহজাহান মিয়া, রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আরডিএফ) চেয়ারম্যান উসিৎ মং, ছোট অংকজানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুন্দর আলী ও তাঁর ছেলে সবুজকেও মারধর করেছেন বলে তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়।
আরো জানা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টু তালতলী শহরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিন একর জমি দখল করে হাওলাদার স-মিল স্থাপন করেছেন। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছ থেকে অবৈধ উৎকোচ নিয়েছেন। গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার নামে দুই শতাধিক স্থানীয় গ্রামবাসীর কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। মনিরুজ্জামান মিন্টু তাঁর ভাই তারিকুজ্জামান তারেক ও নয়ন ব্যাপারীকে নিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে মনিরুজ্জামান মিন্টু জানান, মেয়ে অসুস্থ থাকায় তাঁকে নিয়ে তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার খবর শুনেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগনের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধিকে এভাবে অপসারণ করা যায় না।’ তিনি এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করবেন বলেও জানান।