চিরনিদ্রায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী
মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। আজ বুধবার বাদ আছর মৌলভীবাজার শহরের হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) মাজার শরীফের পাশে মা-বাবার কবরের কাছে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এর আগে বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় অর্ধলক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে জানাজা পড়ান মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দীকি। এ সময় শহরের দোকানপাঠসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সব ধর্ম-বর্ণের লোক মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ছুটে আসেন।
গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ৫৯ মিনিটে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ মহসীন আলীর (৬৭) মৃত্যু হয়। তাঁর প্রথম জানাজা সিঙ্গাপুরের এঙ্গোলিয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার রাতে তাঁর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছে। আজ সকালে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমান বাহিনীর জলপাই রঙের হেলিকপ্টারে করে মৌলভীবাজার এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়ামে সৈয়দ মহসিন আলীর মরদেহ নিয়ে আসা হয়। সেখানে হাজার হাজার মানুষ তাঁকে শেষবারের শ্রদ্ধা জানাতে ও দেখতে ভিড় করে।
স্টেডিয়াম থেকে সৈয়দ মহসিন আলীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহরের শ্রীমঙ্গল রোডের নিজবাড়ি ‘দর্জি মহলে’। সেখানে কিছু সময়ের জন্য মরহুমের মরদেহ পরিবারের সদস্য এবং নিকট আত্মীয়দের দেখার জন্য রাখা হয়। এ সময় স্বজনদের কান্নায় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাজার হাজার মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। পরিবারের পক্ষ থেকে রাখা শোক বইয়ে অনেকেই অভিব্যক্তি লিখেন।
নিজবাড়ি থেকে দুপুর ২টায় মরহুমের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
সুষ্ঠুভাবে মানুষ যাতে জানাজায় অংশ নিতে পারে এ জন্য কাদাভরা মাঠে বালু দিয়ে সংস্কার করা হয়। সেখানেই হয় শেষ জানাজা।
জানাজায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, সংসদ সদস্য আবদুল মতিন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুর রহমান প্রমুখ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনও সে সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে সৈয়দ মহসিন আলীকে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) মাজার প্রাঙ্গণে।
সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর খবরে মৌলভীবাজার জেলায় দিন দিন ধরেই শোক চলছে। সৈয়দ মহসিন আলী মন্ত্রী হওয়ার পর নানাভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হলেও সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর দরজা খোলা ছিল সব সময়।
গত ২ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলায় সফর শেষে ফিরে ৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে নিজেই চালককে ডেকে রাজধানীর শাহবাগে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখেন।
এ অবস্থায় ৪ সেপ্টেম্বর সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এ পর্যায়ে তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের সাহায্যে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌনে ১টায় মন্ত্রীকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ মহসিন আলী গত সোমবার মারা যান।