অপহরণের ৪ দিন পর দুই যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডেফলবাড়ী গ্রাম থেকে আজ সোমবার সকালে দুই যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাদের অপহরণ করা হয়েছিল বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঝিনাইদহ পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম আজম পলাশ (৩০) ও নছিম বিশ্বাসের ছেলে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলাল (২৮)। তাঁদের বাড়ি উপজেলার চরখাজুরা গ্রামে। প্রতিবেশী হওয়ায় দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
পুলিশ জানায়, আজ সকালে গ্রামের মাঠে লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় লোকজন। সকাল ১০টার দিকে সেখান থেকে মাথায় গুলিবিদ্ধ দুটি লাশ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
সকালে ডেফলবাড়ী গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক হাত দূরে দুটি লাশ পড়ে আছে। দুজনের মাথায় গুলির চিহ্ন। চারপাশ ঘিরে আছেন লোকজন ও পুলিশ সদস্যরা।
দুলালের লাশের পাশে বসে আহাজারি করছিলেন তাঁর যমজ ভাই আলম। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, ‘ও ভাই, তোরে গুলি করে মারল কে ভাই? তোর মানুষের কোনো শত্রু নাই, আমি জানি। মানুষে মারার কোনো কথা না।’
আলম অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি বাড়ি থেকে দুলাল ও পলাশকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাঁরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গিয়ে সন্ধান দেওয়ার অনুরোধ করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে আলম বলেন, ‘ওগার হাতে-পায়ে ধরেছি আমরা। রাত ১২টা নাই, ১টা নাই, আমরা কতবার গিয়েছি ওগার কাছে। ওরা জানত না। ওরা সব জানত। কত, আমাগো ওপরে বাপ। আমরা কতি পারছিনে।’
একই স্থানে নিহত পলাশের চাচা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি খুলনায় ছিলেন। শুক্রবার বাসায় এসে শোনেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ভাতিজা হারিয়ে গেছে। কে বা কারা নিয়ে গেছে, তিনি কিছু বুঝতে পারছেন না।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পলাশের বাবা পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা সীমান্তের ১০ মাইল বাজার স্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে পলাশকে আটক করা হয়। এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। বিষয়টি নিয়ে তাঁর স্ত্রী সাবেক কাউন্সিলর মরিয়ম খাতুন গত শুক্রবার ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এ ব্যাপারে আমরা প্রপার (সঠিক) তদন্ত করে দেখব। যারা আজকে এখানে লাশ হয়ে আছে, এদের প্রিভিয়াস (অতীত) রেকর্ড কী আছে না আছে, এগুলো আমরা তদন্ত করে দেখব। তবে এরই মধ্যে জানতে পেরেছি, তাদের স্বভাব-চরিত্র বা তারা খুব একটা ভালো লোক ছিল না; সমাজবিরোধী কাজে জড়িত ছিল।’
এদিকে আজ বিকেলে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে সদর থানা পুলিশ।