তাহিরপুরের চেয়ারম্যানসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউপিএনও) পূর্ণেন্দু দেবের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১৭ জনকে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ দাবি করে, ইউএনও ও ব্যবসায়ীদের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনা সমাধান হলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ইউএনও পূর্ণেন্দু দেবের বাসভবনে হামলার পরিকল্পনা করেন। এজন্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বুরহান উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান উজ্জ্বলসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় মামলা করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, তাহিরপুর বাজারে সাধারণ মানুষ ইউএনও কর্তৃক ব্যবসায়ীকে মারধরের প্রতিবাদে মিছিল বের করলে ইউএনও নিজে ফোন করে আমাকে বলেছেন যাতে বিষয়টি মিটমাট করে দেই। থানার ওসিও আমাকে একই কথা বলেছেন। পরে আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে বসি। ইউএনও সবার সামনে ভুল স্বীকার করেছেন, সবার কাছে ভিডিওও আছে।
কামরুজ্জামান বলেন, ‘আজকে শুনি আমার নামসহ অনেক নিরপরাধ মানুষের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমি বিএনপি করি বিধায় আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দন কান্তি ধর জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে ইউএনও মহোদয়ের সরকারি বাসভবনে হামলার পরিকল্পনা করছিল সবাই মিলে। আর এতে তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যানও যুক্ত থাকার অভিযোগে আছে। তাই তাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক করেছি। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আর আসামিদের বেশির ভাগ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
উপজেলা সদরের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. বেলায়েত হোসেন জানান, তাহিরপুর সদর বাজারে তাঁর একটি চালকল রয়েছে। গত শুক্রবার থেকে নদী দিয়ে বালু এনে তাঁর চালকল প্রাঙ্গণে রেখে পরে ঠেলাগাড়িতে করে নিচ্ছে কয়েকজন লোক। এসব বালু ইউএনও নিজের কাজের জন্য এনেছেন। শনিবার রাতে ইউএনওর ব্যক্তিগত সহকারী বেলায়েত হোসেনকে ফোন করে জানান, ইউএনও তাঁকে ডাকছেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গেলে ইউএনও তাঁর গালে চড় ও কিলঘুষি মারতে থাকেন। আরো দুজন লোক এগিয়ে এসে তাঁকে সরিয়ে দিলে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন।
রোববার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে উপজেলা সদরে বেলা ১১টায় ঝাড়ু হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। তাহিরপুর বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান উজ্জ্বল, মোহাম্মদ আলী, বেলায়েত হোসেন, রাহাত হাসান, নুরে আলম, তানিম আহমদ প্রমুখ।