সুনামগঞ্জে সকালে ভোটার কম
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর প্রথম তিন ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার সবকটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ভোট পড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। ভোট গ্রহণ শুরু হয় আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
ভোট কম পড়ার কারণ হিসেবে বেশিরভাগ ভোটার বলছেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পৌরসভার নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে এই নির্বাচনে।
সাধারণ মানুষের ভোট ছাড়াই প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যান বলে অনেকেই ধারণা করছেন। আর এ জন্যই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।
সকাল থেকে পৌর শহরের কোথাও কোনো ভোটারের লাইন চোখে পড়েনি। অনেকক্ষণ পরপর দু-একজন করে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বড় ভোটকেন্দ্রের অন্যতম সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিন হাজার ১৯৯টি ভোটের মধ্যে তিন ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১২২টি, যা গড়ে ৪ শতাংশ।
একই অবস্থা শহরের বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের। এখানেও দুই হাজার ৬৬০টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১২২টি। জাতীয় মহিলা সংস্থা ভোটকেন্দ্রে দুই হাজার ১৬৬টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৪৮টি। কেবি মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুই হাজার ৯৩টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৩টি। একইভাবে বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে ভোট পড়েছে ৫ শতাংশ।
সদর উপজেলার বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে তিন ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও গড়ে ভোট পড়েছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ।
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সৈয়দ আহমেদ শাহলান জানান, ভোট গ্রহণের পর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫ শতাংশ। ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম। ভোট কাস্টিং ধীরগতিতে হচ্ছে।
বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার জানান, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসছেন না, যার কারণে ভোট কম পড়ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে পারে বলে আশা করছেন তাঁরা।
এদিকে, ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে বেশিরভাগ মানুষ বলেন, সুনামগঞ্জের গত পৌরসভার নির্বাচন ও ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে এই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে না।
শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার আইনজীবী এনাম আহমদ বলেন, ‘আমাদের ঘরে মোট সাতটি ভোট। কিন্তু আমরা কেউই ভোট দিতে যেতে চাচ্ছি না। কারণ, গত পৌরসভার নির্বাচনে ও ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনেও ভোট দিতে গিয়ে দেখি, আমাদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমার আম্মা ভোট দিতে না পেরে খুবই মন খারাপ করেছিলেন। আর গত নির্বাচনে দেখেছি, ভোট না দিলেও প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যান। তাই সেই অভিজ্ঞতা থেকে বাসার কেউ ভোট দিতে আগ্রহী না। তারপরও দেখা যাক, যদি পরিবেশ ভালো মনে করি, ভোট দিলেও দিতে পারি।’
তেঘরিয়া এলাকার ব্যবসায়ী জুবায়ের ইসলাম বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখে মানুষ মনে করছে, ভোটকেন্দ্রে না গেলেও ভোট দেওয়া হয়ে যায়। যার কারণে মানুষ ভোট দিতে চাচ্ছেন না।
তবে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়া শান্তিবাগ এলাকার জিলানী (৬৫) বলেন, ‘মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে সাহস করে ভোট দিতে নিয়ে এসেছি। এসে তো দেখি, পরিবেশ খুবই ভালো। মানুষ যেমন ভয় পাচ্ছে, ভয় পাওয়ায় কোনো কারণ নেই। সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে।’
ঘোলঘর এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মী রিপন চন্দ বলেন, ‘আমি ভোট দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম, তাই সকাল সকাল আমার ভোট দিয়ে এসেছি। ভোট দিতে গিয়ে খুবই ভালো লেগেছে। গত নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচন না। নির্বাচনের পরিবেশ খুবই ভালো। প্রশাসন ভালো পরিবেশ বজায় রেখেছে। এমন পরিবেশ থাকলে মানুষ ভোট দেওয়ার উৎসাহ ফিরে পাবে।’
আরপিননগর এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মী সামির পল্লব বলেন, ‘ভোট দিয়ে এসেছি। পরিবেশ খুবই ভালো। তবে অনেকেই ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না। এই নির্বাচনে প্রশাসন খুবই ভালো ভূমিকা পালন করছে। সুনামগঞ্জ শহরে নির্বাচনের ভালো পরিবেশ আছে। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারছে।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ আবদুল আহাদ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনো ধরনের অনিয়ম আমরা সহ্য করব না। যদি কেউ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সুনামগঞ্জ শান্তির শহর। তাই আমরা সব জায়গায় শান্তিময় পরিবেশ বজায় রাখছি। আমাদের প্রশাসন কড়া নজরদারি করছে। জেলার নয় উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জে ১০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও গত শুক্রবার রাতে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, দিরাই, শাল্লা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও ধরমপাশা উপজেলায় ভোট হচ্ছে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৫ প্রার্থী রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদের ২৮ জনের মধ্যে নয়জন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। বাকিদের মধ্যে স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী ১৪ জন, দল থেকে বহিষ্কৃত বিএনপির চারজন ও একজন আছেন নির্দলীয়।
এই নয় উপজেলায় মোট ভোটার ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮০৩ জন। কেন্দ্র আছে ৫৪১টি। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে এক হাজার ৯০০ পুলিশ, ২১ প্লাটুন বিজিবিসহ র্যাব ও আনসার রয়েছেন। এ ছাড়া নয়জন বিচারিক হাকিম নয়টি উপজেলায় এবং তিনটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী হাকিম দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলেছেন, ‘জেলার নয়টি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আশা করি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট গ্রহণ শেষ হবে।’