পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু, সংঘর্ষে চীনা শ্রমিক নিহত
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বয়লার থেকে পড়ে এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় লাশ গুমের চেষ্টার গুজব ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক হামলা, ভাঙচুরসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় চীনা শ্রমিকদের সঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে এক চীনা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে এই হামলা ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
নিহত বাংলাদেশি শ্রমিকের নাম সাবিন্দ্র দাস (৩২)। তিনি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জয়নগর গ্রামের নগেন্দ্র দাসের ছেলে। নিহত চীনা শ্রমিকের নাম জাং ইয়াং সাং। আজ বুধবার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলাপাড়ায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। ধানখালীর কাজল এন্টারপ্রাইজের নিযুক্ত শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস এ বছরের ১৪ মে থেকে সেখানে কাজ করছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বয়লার থেকে নিচে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এই সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা লাশ গুমের চেষ্টা করেন বলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকরা। দুপুর ৩টার দিকে তারা উত্তেজিত হয়ে ক্যান্টিনে, অফিসে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ওয়েল্ডারে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এতে বেশ কয়েকজন চীনা শ্রমিক আহত হন। এই ঘটনার পর চীনা শ্রমিকরা রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিরোধ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
এদিকে সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে প্রতিদিনের সংবাদের কলাপাড়া প্রতিনিধি ফরাজী মো. ইমরানের মোটরসাইকেল ও মাইটিভির কলাপাড়া-কুয়াকাটা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম রয়েলের ক্যামেরা ভাঙচুর করেন চীনা শ্রমিকরা। চীনা শ্রমিকদের ধাওয়া খেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পুলিশের কাছে আশ্রয় নেন।
পটুয়াখালীর নির্মাণাধীন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশি শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয় শ্রমিকরা। ছবি : এনটিভি
রাত ১১টার দিকে পটুয়াখালী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিসিপিসিএলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহমনি জিকো জানান, ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গুজবের কারণে উত্তেজিত হয়ে ক্যান্টিনে, অফিসে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ও ওয়েল্ডারে হামলা-ভাঙচুর চালায়। গত রাতে কয়েক দফা হামলায় গুরুতর আহত ছয় চায়না শ্রমিককে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে আজ সকালে জাং ইয়াং সাং নামের একজন চীনা শ্রমিক মারা গেছেন।
এ ঘটনায় আজ সকাল থেকে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে। ঘটনার রাতেই অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক হামলার আশঙ্কায় কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়েছে বলে বিভিন্ন জনশক্তি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
এদিকে বুধবার সকালেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে সংঘবদ্ধ হন স্থানীয় শ্রমিকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সকালে হেলিকপ্টারে করে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আসেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। বিবাদমান শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতায় পৌঁছান তিনি।
পটুয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাফিজ জানিয়েছেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুরোধে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আট প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন। বাংলাদেশি নিহত শ্রমিকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর চীনা শ্রমিকের লাশ বরিশাল মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে আরো দুজন চীনা শ্রমিককে উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।