রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ, ৯ আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুর ২টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এ সময় আদালত এ মামলায় পলাতক নয়জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির।
আজ শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয় বরগুনা জেলা কারাগারে থাকা রিফাত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক সাত আসামিকে। তাঁরা হলেন মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি ও মো. সাগর।
এ ছাড়া এ মামলায় জামিনে মুক্ত থাকা আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে।
রিফাত হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২৪ জনের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্ত মো. মুছা, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মো. হাসান, কিশোর অভিযুক্ত মো. আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান, মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ, মারুফ মল্লিক, রিফাত হাওলাদার, আবু নঈম ও প্রিন্স মোল্লা পলাতক। আর এ মামলার এজাহারে প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু বলেন, শুনানি শেষে আদালত রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে এ মামলায় অভিযুক্ত পলাতক নয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওই দিন সব অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। তাঁদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩০২, ৩৪, ১৩৯, ১২০ (বি-১) ধারায় অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় শিশু ও কিশোর অভিযুক্তদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেই আদেশ শিশু আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তাঁরা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর মধ্যে গত ২ জুলাই রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
এদিকে অনেক তর্কবিতর্কের পর গত ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিন দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ১৯ বছর বয়সী মিন্নি জামিনে থাকা অবস্থায় তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এ ব্যত্যয় ঘটলে তাঁর জামিন বাতিল হবে। পরে ৩ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান মিন্নি। মুক্তি পাওয়ার পর আজই প্রথম আদালতে হাজিরা দিলেন মিন্নি।