ময়মনসিংহে ব্যক্তি নয়, লড়াই হবে নৌকা আর ধানের শীষে
ময়মনসিংহে জমে উঠেছে পৌরসভা নির্বাচন। রাতদিন গণসংযোগ করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। দলীয় প্রতীক থাকায় সমর্থক ভোটারদের পছন্দ দলীয় প্রার্থী। উন্নয়ন ও জনবান্ধব প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগে উৎসাহ বেড়েছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে।
নির্বাচনী গণসংযোগে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র পদপ্রার্থীদের চাঙ্গাভাব থাকলেও বিএনপির দলীয় বিরোধী প্রার্থীরা এগোচ্ছেন ধীরগতিতে। মেয়র ও ভোটারদের কেউ কেউ সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহে ১১ পৌরসভার নয়টিতে নির্বাচন হচ্ছে। প্রশাসনিক কারণে ময়মনসিংহ সদর ও হালুয়াঘাট পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে না।
গৌরীপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, বিএনপির প্রার্থী সুজিত কুমার দাস ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক মেয়র শফিকুর ইসলাম হবি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪১ জন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মাঠে আছেন ১৬ জন।
ত্রিশাল পৌরসভায় নির্বাচনী মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম জুয়েল সরকার, বিএনপির প্রার্থী আমিনুল ইসলাম আমিন, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ বি এম আনিসুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম। মাঠে আছেন কাউন্সিলর পদে ৩২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৫ জন প্রার্থী।
এ ছাড়া মুক্তাগাছা পৌরসভায় মেয়র পদে পাঁচজন, ফুলপুরে চারজন, ফুলবাড়ীয়ায় চারজন, ভালুকায় চারজন, গফরগাঁওয়ে দুজন, ঈশ্বরগঞ্জে চারজন ও নান্দাইলে পাঁচজন মেয়র পদে লড়ছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯ পৌরসভায় ৩১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মুক্তাগাছায় ৩২ জন, ফুলপুরে ৪৫ জন, ফুলবাড়ীয়ায় ৪৬ জন, ভালুকায় ৩১ জন, ত্রিশালে ৩২ জন, গফরগাঁওয়ে ৩২ জন, ঈশ্বরগঞ্জে ২৭ জন, নান্দাইলে ৩২ জন এবং গৌরীপুরে ৪১ জনকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১০৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মুক্তাগাছায় ১২ জন, ঈশ্বরগঞ্জে ১১ জন, নান্দাইলে ৯ জন, ফুলপুরে ১০ জন, ফুলবাড়ীয়ায় ১২ জন, ভালুকায় ১০ জন ও গফরগাঁওয়ে ১১ জন প্রার্থী।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের ভোটে সিল মারো’ এই স্লোগান নিয়ে ময়মনসিংহের সর্বত্র এখন পৌর নির্বাচণী আমেজ উৎসব। মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রাতদিন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আদর্শ পৌরসভা গঠনের, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলের। প্রার্থীদের নানা সমীকরণের পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী পেয়ে অনেক ভোটার সমর্থক খুশি হলেও ভোট ছিনতাই, ভোট প্রদান ও পরে তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আছে ভোটারদের।
গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার উন্নয়নের জন্য সরকারের আরো সহযোগিতা দরকার। উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা তাঁকেই বেছে নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী সুজিত কুমার দাস বলেন, তাঁর সমর্থক-ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ধানের শীষে ভোট দিয়ে খুন, গুম, নির্যাতনের জবাব দিবে জনগণ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনিই বিজয়ী হবেন।
অন্যদিকে গৌরীপুরের বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর ও প্রার্থী দিলুয়ারা আকতার প্রতিশ্রুতি দেন, ফের নির্বাচিত হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করাসহ নারীদের উন্নয়ন কাজ করবেন।
ত্রিশাল পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী জাহিদুল ইসলাম সরকার জুয়েল বলেন, বর্তমান মেয়র ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌরসভার কোনো উন্নয়ন করেনি। রাস্তা ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য জনগণ নতুন প্রজন্মের পরিশ্রমী প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই বেছে নেবেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামান বলেন, তিনি পাঁচ বছর ব্যাপক উন্নয়ন করে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। জনগন তাঁকেই মেয়র হিসেবে দেখতে চায়।
বিএনপি দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলাম আমীন বলেন, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত মডেল পৌরসভা গঠন, উন্নয়ন ভাবনায় পৌরবাসীর পছন্দ ধানের শীষ।
ত্রিশাল পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মতে সব ব্যবস্থা এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রাখা হবে।