আজ রোববার সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত
বিশ্ব ইজতেমার মূল আকর্ষণ আখেরি মোনাজাত কাল রোববার অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমা মাঠের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে কাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে এই মোনাজাত হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম।
এদিকে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ও শিশু গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার উত্তরা ও এর আশপাশের এলাকায় এসে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন।
আখেরি মোনাজাতের আগে হবে হেদায়াতি বয়ান। এই বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার তিনদিনের প্রথম দফা। আগামী শুক্রবার শুরু হবে তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা।
মোনাজাতের দিন চলবে শ্যাটল বাস : গাজীপুরের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার আখেরি মোনাজাতের সময় পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, আবদুল্লাহপুর-কালিয়াকৈর সড়কে সাভারের বাইপাইল থেকে আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে মীরের বাজার পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আখেরি মোনাজাতের দিন রোববার সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসল্লিদের সুবিধার্থে প্রায় অর্ধশত বিআরটিসি বাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো প্রায় অর্ধশত (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) শ্যাটল বাস চলাচল করবে।
বিশেষ ট্রেন : আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ২৮টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
টঙ্গী রেলওয়ে জংশন সূত্রে জানা গেছে, আখেরি মোনাজাতের দিন জামালপুর-টঙ্গী পথে একটি, আখাউড়া-টঙ্গী পথে একটি, টঙ্গী-ময়মনসিংহ এবং লাকসাম-টঙ্গী পথে বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করবে। এ ছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে-পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে বলে জানিয়েছেন টঙ্গীর স্টেশনের কর্মকর্তা মো. হালিমুজ্জামান।
বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লি : গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ১০০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মুসল্লি এরই মধ্যে ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। আরো বিদেশি মেহমান টঙ্গীর পথে রয়েছেন।
ফলে এবারের ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লির উপস্থিতির সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আয়োজকরা আশা করছেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের জন্য মোট তিনটি পৃথক বিদেশি নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভিআইপিরা কে কোথায় মোনাজাতে অংশ নেবেন : বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বয়ান মঞ্চে বসে মোনাজাতে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও দোয়া মঞ্চের পাশে সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশির ভাগ সময় টঙ্গীর বাটা সু কারখানার ছাদে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিলেও মুসল্লিদের ভিড় বেশি হলে ও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় অবস্থান নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় গত আখেরি মোনাজাতের মতো এবারও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোনাজাতে অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ ময়দানের বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হয়ে মোনাজাতে অংশ নেবেন।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য : গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা সফলভাবে এগিয়ে চলছে। আশা করছি, আল্লাহর রহমতে আখেরি মোনাজাত নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে। আমরা সরকারি সব নির্দেশনা পালন করে যাচ্ছি। মুসল্লিদের চাহিদা মোতাবেক সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখানে আসা সাধারণ মুসল্লিরা খুবই সহমর্মিতা ও ধৈর্যের পরিচয় দেন। তাই ইজতেমায় সব কিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।’
যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা : গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র এএসপি সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য ট্রাফিক বিভাগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখতে এবার ডিজিটাল নজরদারি তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রোববার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এ ছাড়া টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় কলকারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ বিশ্ব ইজতেমার জন্য একদিন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক যাতে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে পারেন, সে জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
যেসব এলাকায় গাড়ি পার্কিং করা যাবে না : ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার বিকেল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মহাখালী ক্রসিং থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের টঙ্গী থেকে মীরের বাজার পর্যন্ত, আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, প্রগতি সরণির মধ্যবাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রগতি সরণির রাস্তার দুই পাশে যানবাহন পার্কিং করা যাবে না।
বিআরটিসির বাস সার্ভিস : মুসল্লিদের সুবিধার্থে গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিআরটিসির ২২৮টি স্পেশাল বাস সার্ভিস চলাচল শুরু করেছে। এসব সার্ভিস ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ৬ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলাচলকারী স্পেশাল বাসের মধ্যে তিনটি বাস বিদেশি মুসল্লিদের জন্য রিজার্ভ থাকবে। আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ২৯টি বাস, শিববাড়ী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ১৩টি, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ১৭টি, গাজীপুর-চৌরাস্তা, মতিঝিল-ভায়া ইজতেমাস্থল ছয়টি, গাবতলী-গাজীপুর ভায়া ইজতেমাস্থল পাঁচটি, গাবতলী-মহাখালী ভায়া ইজতেমাস্থল ৩৫টি, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ২৫টি, মতিঝিল-বাইপাল ভায়া ইজতেমাস্থল আরো ২০টি বাস চলবে। এ ছাড়া ঢাকা-নরসিংদী ভায়া ইজতেমাস্থল ২০টি, চট্টগ্রাম রোড-সাভার রোড ২০টি, ঢাকা-কুমিল্লা রোডে চলবে আরো ১৫টি বাস।