বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতাই চুরির কারণ!
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের দুর্বলতার কারণে নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ঘাটতির কারণেই রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে।’
আজ রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানসহ ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এম আসলাম আলম। তিনি আরো বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি আছে।’
রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এটাই ছিল প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
বৈঠক শেষে প্রাথমিক তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য প্রযুক্তিগত (আইটি) দুর্বলতার বিষয়টিই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন সচিব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সমালোচনা করে এম আসলাম আলম বলেন, ‘পুরো সিস্টেমে দুর্বলতাসহ দক্ষ জনবলের অভাব আছে।’ প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা যথাযথ প্রশিক্ষিত নয় বলেও মনে করেন তিনি।
এম আসলাম আলম বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা সুষ্ঠুভাবে বের করতে হলে আরো সময় প্রয়োজন। রিজার্ভের অর্থ বাংলাদেশ থেকে চুরি হয়েছে, নাকি ফেডারেল রিজার্ভ থেকে চুরি হয়েছে- তা জানতে আরো গভীর তদন্ত প্রয়োজন।’
‘চুরির পরিমাণ ৮১ মিলিয়ন ডলার’
এম আসলাম আলম আরো জানান, ‘হ্যাকিং এর মাধ্যমে মোট ৯৫১ মিলিয়ন ডলার চুরি চেষ্টা হয়েছিল। প্রকৃত চুরির পরিমাণ ৮১ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। ফেরত পাওয়া অর্থ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। বাকি অর্থ প্রসেস হয়ে ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে চলে গেছে।’
আসলাম আলম আরো জানান, ‘ফিলিপাইনের মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজ করেছে। তবে অর্থ ফেরত পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’
‘এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটি হয়নি’
আসলাম আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি। ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় বিষয়টির ওপর কাজ চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ফরেনসিক এক্সপার্ট নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কম্পিউটারসহ পুরো সিস্টেম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে তারা। এ কাজের রিপোর্ট পেতে বেশ সময় লাগবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসলাম আলম বলেন, পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি জরুরি বোর্ড মিটিং ডাকতে বলা হয়েছে। আগামীকাল দেশে ফিরবেন গভর্নর। আগামী পরশুই বসে এই বিষয়ে আলোচনায় বসব।
সচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন আকারে জমা দেব। এরপর যে সিদ্ধান্ত হবে তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সচিব আরো বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়েও অর্থ চুরির বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ অডিট কমিটির আরো দুটি মিটিং হয়েছে। সেখানেও কিছু জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি একটি বড় সমন্বয়হীনতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব ছিল, চুরির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানানো।’
সচিব বলেন, ‘চুরির পরপর কেন সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে নিজেদের পক্ষ থেকে তদন্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ বক্তব্যে আমরা সন্তুষ্ট নই।’
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের অ্যাকাউন্ট থেকে আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
এ দাবির পরপরই ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কোনো প্রমাণ পায়নি ফেডারেল রিজার্ভ।
গত বুধবার ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা।