মামা-ভাগ্নে যেখানে ‘আপদ’ সেখানে
প্রবাদ আছে, ‘মামা-ভাগ্নে যেখানে, আপদ নাই সেখানে।’ কিন্তু নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নে মামার জন্য ‘আপদ’ হয়ে উঠেছেন আপন ভাগ্নে।
চালাকচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মামা সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল মাস্টার। বর্তমান এই চেয়ারম্যান এর আগে বিএনপির সমর্থন নিয়ে একাধিক বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এবার দলটির মনোনয়ন পাননি। তাই এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। আর তাঁর আপন ভাগ্নে ফকরুল মান্নান মুক্তু নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে।
চালাকচর ইউনিয়নে মামা-ভাগ্নে ছাড়াও আরো তিনজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির মোহাম্মদ আশরাফুল আলম কাদির, মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাজাহান মিয়া ও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
চালাকচরের ভোটাররা বলছে, নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত মামা-ভাগ্নের মধ্যে। তাই তারা অপেক্ষা করছে ৪ জুনের নির্বাচনের জন্য। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কাও আছে তাদের মধ্যে। এরই মধ্যে ভাগ্নে মুক্তুর লোকজন মামা বুলবুল মাস্টারের লোকদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, চালাকচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারটি মামা বাড়ির দখলে রয়েছে। মামা বাড়ি মানে সরদার বাড়ির দখলে। কিন্তু এবার তা মামার বাড়ি থেকে ছিনিয়ে আনতে চালাকচর ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে ঘরে আদা-জল খেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ভাগ্নে আওয়ামী লীগ নেতা ফকরুল মান্নান মুক্তু। তাঁর বাবা প্রয়াত আবদুল মান্নান মাস্টার ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি শ্বশুর বাড়ি থেকে চেয়ারম্যানের চেয়ার ছিনিয়ে আনতে না পারলেও এবার ছেলে মুক্তু নৌকায় করে ঠিকই মামার কাছ থেকে চেয়ার ছিনিয়ে আনবেন বলে আশা আওয়ামী লীগের সমর্থকদের।
চালাকচরের লোকজন জানান, স্বাধীনতার আগে চালাকচর ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রথমে সরদার আছমত আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল থাকেন। স্বাধীতার পর তিনি খুন হন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর আপন ছোট ভাই সরদার মোমতাজ উদ্দিন জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সরদার মোমতাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তারই ভাতিজা সরদার আছমত আলীর বড় ছেলে সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল মাস্টার প্রথমে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে পরপর তিন বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে অন্য প্রার্থীদের পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার তাঁকে পরাজিত করে ভোট যুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতে চান তাঁর ভাগ্নে আওয়ামী লীগের মুক্তু।
বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল মাস্টার মনোহরদী-বেলাব আসনে বিএনপির মনোনয়নে তিন বারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের বড় ভাই।