ফুল তোলার সময় সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর-কাষ্টসাগরা গ্রামের রাধামদন গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভোরে মঠের বাইরে প্রাচীরসংলগ্ন গাছে পূজার জন্য ফুল তুলছিলেন শ্যামানন্দ। এ সময় ডিসকভারি ব্র্যান্ডের ১০০ সিসির একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত মঠের গেটের পাশে যায়। পরে তারা শ্যামানন্দকে উপর্যুপরি কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আগন্তুকরা এসে প্রথমে সেবায়েতের হাত ধরে টানতে টানতে রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। এর পর তারা ঘাড়ে, পিঠে ও মাথায় ধরালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শ্যামানন্দকে জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মাগুরার দিকে মxটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় শ্যামানন্দকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক এস এম মাসুদুজ্জামান সকাল ৬টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) আলতাফ হোসেন বলেন, পুরোহিত আনন্দ গোপাল হত্যার মতো করে এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, ঘটনার পর এলাকায় অমুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ। তবে পুলিশের একাধিক দল হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে।
ঝিনাইদহে এক মাসের ব্যবধানে একই কায়দায় সেবায়েত ও পুরোহিতকে খুন করা হলো। এ ছাড়া পাবনায় শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সেবাশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকেও (৬২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
গত ৭ জুন সদর উপজেলার মহিষাডাঙ্গা ভাগাড় এলাকায় আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী (৬৫) নামের এক পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
আনন্দ গোপালের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, অন্যান্য দিনের মতো নলডাঙ্গা এলাকার সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পূজা দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন আনন্দ গোপাল। পথে মহিষাডাঙ্গা ভাগাড় এলাকায় মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে।
অন্যদিকে, ১০ জুন শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরের মানসিক হাসপাতালের গেটের কাছে নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিত্যরঞ্জনের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের আরুয়া কংশু এলাকায়। তিনি ৪০ বছর ধরে হেমায়েতপুরের শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমে সেবায়েত হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হাসান জানান, ডায়াবেটিসের রোগী নিত্যরঞ্জন প্রতিদিন ভোরে হাঁটতেন। সেদিন ভোরেও হাঁটছিলেন। পাবনা মানসিক হাসপাতালের উত্তর গেটে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে ঘাড়ে-মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে।