বরগুনায় হিন্দু বাড়িতে হামলা, ক্ষেত নষ্ট
বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর টেপুরা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে কয়েক দফা হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে চার একর জমির কয়েক হাজার তরমুজ কুপিয়ে নষ্ট করা হয়।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপারসহ (এসপি) জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
উত্তর টেপুরা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন অভিযোগ করেন, গ্রামের প্রভাবশালী আবদুস সালাম মৃধা (৫০), তাঁর ছেলে রিয়াজ মৃধা (২২) ও তাঁদের সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করে আসছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার সকালে গ্রামের শংকর বেপারির (৩৮) সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সালাম মৃধার বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর বিকেলে বাড়ির পাশের একটি মাঠে গরু আনতে গেলে শংকরকে ধাওয়া করেন সালামের ছেলে রিয়াজ মৃধা ও তাঁর সহযোগীরা। এ সময় শংকর দৌড়ে পাশের রাধা-গোবিন্দ মন্দিরে আশ্রয় নেন। স্বজনরা রক্ষা করতে এলে মন্দিরের ভেতরে সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখে হামলাকারীরা।
খবর পেয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে সালিস বৈঠক করার নির্দেশ দেন। পরে ইউপি সদস্য, গ্রামপুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের উদ্ধার করা হয়।
শংকর বেপারি এনটিভি অনলাইনকে জানান, রিয়াজ ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গোরা গভীর রাতে পুনরায় তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় বাড়িতে কাউকে না পেয়ে ঘরে হামলা চালিয়ে স্বর্ণালংকারসহ টাকা লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় কুপিয়ে ভাঙচুর করা হয় রাধা-গোবিন্দ মন্দিরও।
‘দীর্ঘদিন ধরে বহু শ্রম-সাধনার মধ্য দিয়ে আমি তিল তিল করে তরমুজক্ষেত করেছি। গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা সেই ক্ষেত কুপিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। আমার সর্বস্ব শেষ করে দিয়েছে।’ বলেন শংকর।
পরিবারের অপর এক সদস্য স্বপন ব্যাপারী বলেন, এ ঘটনায় তাঁদের পরিবার এখন ভীত-সন্ত্রস্ত।
জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুর্বৃত্তরা হিন্দু সম্প্রদায়ের তরমুজ ক্ষেত নষ্ট করেছেন, টিনের চালার মন্দির ঘরেও কয়েকটি কোপের চিহ্ন দেখা গেছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির এরই মধ্যে সংস্কার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, সালাম মৃধার ছেলে রিয়াজ মৃধা দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অপরাধ করে আসছে। স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠকে এর আগেও বিভিন্ন অপরাধের কারণে তাঁকে একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে।