ফরিদপুরে আ.লীগ নেতা বাবু আরো ৪ দিনের রিমান্ডে
চাঁদাবাজির মামলায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোকাররম মিয়া বাবুর আরো চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় ফরিদপুরের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. হামিদুর রহমান ওই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত সোমবার আরেকটি চাঁদাবাজি মামলায় বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন একই আদালত। এক সময়ের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর বিরুদ্ধে ছয়টি চাঁদাবাজি ও একটি ধর্ষণের মামলা রয়েছে।
আজ আদালতে গিয়ে দেখা যায়, ঠিক পৌনে ১২টায় মোকাররম মিয়া বাবুকে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে একটি প্রিজন ভ্যানে করে আদালত চত্বরে আনা হয়। প্রিজন ভ্যানের সামনে পুলিশের আলাদা একটি গাড়ি ছিল। গতকাল সোমবার আদালতে বাবু পৌনে এক ঘণ্টা অঝোর ধারায় কাঁদলেও আজ অনেকটাই স্বাভাবিক ছিলেন। আদালত চত্বরে ছিল অসংখ্য মানুষের ভিড়। প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর পর সেখানে উপস্থিত থাকা তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা বাবুকে কাঁদতে নিষেধ করে বলেন, ‘আজ কোনো প্রকার কান্নাকাটি করবা না। শক্ত হবার চেষ্টা করো।’
গায়ে ঘিয়া রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা ও পায়ে স্যান্ডেল পরা মোকাররম মিয়া বাবুকে হাটিয়ে ১১টা ৪৭ মিনিটে আদালতের কক্ষে হাজির করা হয়। তখন আদালতে সি আর মামলার শুনানি চলছিল। বাবুকে আদালত কক্ষে ঢোকানোর পর একমাত্র আইনজীবী ছাড়া সবাইকে পুলিশ বের করে দেয়। আদালত কক্ষে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। সি আর মামলার শুনানির পর শুরু হয় জি আর মামলার শুনানি। নিয়ম অনুযায়ী প্রায় শেষ দিকে বেলা ১২টা ১০ মিনিটে মোকাররম মিয়া বাবুর মামলার শুনানি শুরু হয়। এ সময় আদালতের বিচারক মো. হামিদুর রহমান সবাইকে এক সাথে কথা না বলে এক এক করে সুশৃঙ্খলভাবে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান।
শুনানি শুরু করেন আজকের চাঁদাবাজি মামলার বাদী শহর যুবলীগের সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন বরকতের পক্ষের আইনজীবী স্বপন কুমার পাল। স্বপন পাল রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘আসামি একজন চাঁদাবাজ। মামলার বাদীর কাছ থেকে একটি চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন। আরো ৫০ লাখ টাকার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন মোকাররম বাবু ও তাঁর লোকজন। মামলার সাথে চেকের নম্বর পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। আসামি বাবুকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ তাঁর সাথে আরো কারা কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত এবং চাঁদার ৫০ লাখ টাকা কোথায় রেখেছেন তা উদঘাটনের জন্য রিমান্ডের কোনো বিকল্প নেই।
পর্যায়ক্রমে স্বপন পালের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবী জাহিদ ব্যাপারী। এরপর আইনজীবী অনিমেষ রায়, খন্দকার জাহিদ হোসেন জয়, শফিকুর রহমান উজ্জ্বল রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
বাদীপক্ষের বক্তব্য শেষ হলে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী বদিউজ্জামান বাবুল বক্তব্য শুরু করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘হুজুর আমি, আপনি এই মাটিরই সন্তান। আসামি মোকাররম মিয়া বাবু এই শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ। তাঁর অনেক সুনাম রয়েছে। তাঁর দ্বারা কোনোভাবেই চাঁদাবাজি করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া বাবুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অনেক দিন আগের একটি পুরোনো ঘটনা। এত দিনে মামলার বাদী ভয়ে থানায় মামলা করার সাহস না পলেও আদালতে মামলা করতে পারতেন অথবা থানায় একটি জিডি করতে পারতেন। অথচ বাদী তার কোনোটিই করেননি। এতেই বোঝা যায় মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এ সময় মামলার বাদী সাজ্জাদ হোসেন বরকত মৃদু হাসছিলেন।
বিচারক ১২টা ২৮ মিনিটে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ১২টা ৩০ মিনিটে বাবুকে আদালত থেকে বের করে সোজা প্রিজন ভ্যানে তুলে জেলা কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। বেলা পৌনে ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা পৌনে এক ঘণ্টা মোকাররম মিয়া বাবুকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বাবু আজ আদালতে চোখের পানি না ফেললেও তিনি ছিলেন বিমর্ষ ও চিন্তিত। মুখ ছিল মলিন।
আদালত থেকে বের হয়ে হেঁটে প্রিজনভ্যানের দিকে যাওয়ার পথে বাবু আজ অনেকের সাথে কথা বলেছেন। আজ তাঁর হাতে কোনো হাতকড়া ছিল না।