ছাত্রলীগ আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় : প্রবাসী মন্ত্রী
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, একজন বিতর্কিত ছাত্রনেতার কারণে আজ ১০টি বছর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয় না। কোনো কমিটি নেই। ছাত্রলীগ আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে জেলা শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী এ সময় আগামীকাল শনিবার সকালে ছাত্রলীগের নেতাদের তাঁর বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জেলা ছাত্রলীগের একটি কমিটি আমি করে দেব।’ এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘মোশারফ ভাইয়ের সিদ্ধান্ত, চূড়ান্ত, চূড়ান্ত’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোকাররম মিয়া বাবু ও জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সদ্য অপসারিত তাঁর এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তাঁদের মতো দুই ঘুষখোর ব্যক্তিকে আমি ধরিয়ে দিয়েছি। ফরিদপুরের কোনো মানুষ যদি কোনো কাজের জন্য কাউকে ঘুষ দেয় তবে এই দুই নেতার মতো তাদেরও জেলে যেতে হবে। ফরিদপুরের মাটিতে কোনো ঘুষখোর, চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসীদের জায়গা হবে না।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘অনেকে তাঁকে দেশনেত্রী বলেন। আমি বলি চুলের নেত্রী। কারণ তাঁর চুল দেখে আমার মনে হয় যেন পাখির বাসা। আজ শ্রমিকদের একটি বিশেষ দিন হলেও যাঁরা তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা একটি অনুষ্ঠান না করে প্রমাণ করেছেন তাঁরা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কোনো কাজ করেন না। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই ফরিদপুরে শ্রমিকদের এত বড় একটি জনসভা করা সম্ভব হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ফরিদপুর জেলা হচ্ছে সারা বাংলাদেশের মধ্যে একটি উন্নয়নের রোল মডেল। স্বাধীনতার পরে যে উন্নয়ন হয়নি, মাত্র ছয় বছরে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি গুণ উন্নয়ন আমি করেছি। ফরিদপুরের কোনো রাস্তা আর ইট বিছানো ছাড়া থাকবে না। ফরিদপুরে ঢাকা ইউনিভার্সিটির মতো একটি ভার্সিটি করা হবে, বিমানবন্দর হবে ফরিদপুরে, গেরদা ও কৈজুরী ইউনিয়নের ৯০০ একর জায়গার ওপর ইপিজেড নির্মাণ করা হবে। যেখানে প্রতিবছর ফরিদপুরের দুই লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হবে।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে আজ অনেক উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। তিনি সমাবেশে বলেন, ‘আমার মন আজ খুব ভালো। আপনারা যা চাইবেন, আমি তাই আপনাদের দিয়ে দেব।’
এ সময় এক যুবক ফরিদপুরকে বিভাগ চাই বলে উঠলে মন্ত্রী তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘ফরিদপুর ইতিমধ্যেই বিভাগ হয়ে গেছে। তুমি পত্রপত্রিকা পড়ো না বলেই জানো না।’ তিনি আশ্বাস দেন ফরিদপুরে ঢাকার মতো একটি হাতিরঝিল করা হবে। কুমার নদ খননের মাধ্যমে আগামী বছর এই নদী দিয়ে লঞ্চ চলবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘একসময় মানুষ ফরিদপুরকে ফকিরপুর হিসেবে জানলেও এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত আধুনিক জেলা হচ্ছে ফরিদপুর। ফরিদপুরের কোনো প্রজেক্ট না থাকলে একনেকের কোনো মিটিং হয় না।
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আক্কাস হোসেনের সভাপতিত্বে বিশাল শ্রমিক সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী, পুলিশ সুপার জামিল হাসান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর প্রমুখ।
শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান খন্দকার লেবি, যুগ্ম আহ্বায়ক এ এইচ এম ফুয়াদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শওকত আলী জাহিদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, আওয়ামী লীগের নেতা সামছুল আলম চৌধুরী, আইনজীবী জাহিদ ব্যাপারী, শ্রমিক নেতা শহীদ মোল্লা, বেলায়েত হোসেন ফকির, মো. আজাদ, বাসশ্রমিক নেতা গোলাম মো. নাসির, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অনিমেষ রায়, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারহানসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
এদিকে সমাবেশে ফরিদপুর জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মো. আজাদের নেতৃত্বে দলের অর্ধশত নেতাকর্মী মন্ত্রীর হাতে ফুল দিয়ে শ্রমিক লীগে যোগ দেন।