হত্যা মামলায় এমপি রানা কারাগারে
টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক আহম্মদ হত্যা মামলার আসামি সংসদ সদস্য (এমপি) আমানুর রহমান খান রানার জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার সকালে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন রানা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি মনিরুল ইসলাম খান আসামিপক্ষের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট বাকি মিয়া, ফায়েজুর রহমান ও খন্দকার ফায়েকুজ্জামান নাজিমসহ বেশ কয়েকজন জামিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মদ হত্যার অভিযোগে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ ১৪ জনকে আসামি করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত ৬ এপ্রিল আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। টাঙ্গাইলের সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন—আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক ও সমির হোসেন।
তাঁদের মধ্যে আজ সকালে মামলার প্রধান আসামি আমানুর রহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও সমির হোসেন আগেই গ্রেপ্তার হয়ে টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন। আসামি ফরিদ হোসেন কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। আর আসামি আবদুল হক পলাতক অবস্থায় কয়েক মাস আগে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ জানান, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফারুক আহম্মদ হত্যা মামলায় প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামের আরো একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করে। তাঁরা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন (২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি) সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা রাজাকে দায়িত্ব দেন ফারুক আহম্মদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজপাড়ায় তাঁর একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেওয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার সময় পথেই রাজার সঙ্গে ফারুক আহম্মদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিকশা ছেড়ে ফারুক আহম্মদের রিকশায় ওঠেন এবং তাঁকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে রানা ও ফারুক আহম্মদের কথা হয়। রানা ফারুককে ওই পদে প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফারুক এতে রাজি হননি। একপর্যায়ে ফারুক সেখান থেকে বের হলে সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। এ সময় অন্যরা তাঁর মুখ চেপে ধরেন। ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রানার নির্দেশে সেখান থেকে রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিকশায় লাশ তুলে নেন রাজাসহ দুজন। তাঁরা ফারুকের বাসার কাছে তাঁর লাশ ফেলে চলে যান।
ফারুক আহম্মদের হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নাহার আহম্মেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আজ রোববার সকালে আদালত চত্বরে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদী ও নিহত মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মদের স্ত্রী নাহার আহম্মেদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় স্বামী হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি এ মামলার সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।