নেশার টাকার জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন?
মানিকগঞ্জে যৌতুক ও নেশার টাকার জন্য এক স্বামী তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিপলা আক্তার শিপু নামের ওই গৃহবধূ বর্তমানে জেলা হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ঘটনার পর থেকে স্বামী বুলবুল ইসলাম পলাতক।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জয়রা গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে বুলবুল ইসলামের সাথে তিন মাস আগে শিপলা আক্তারের বিয়ে হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসাধীন গৃহবধূ শিপলা জানান, কলেজের যাওয়া-আসার পথে বুলবুল তাঁর সাথে জোর করে প্রেম করতে চাইতেন। এতে সম্মতি না দেওয়ায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেন। সর্বশেষ অ্যাসিড মারাসহ মা-বাবাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে পারিবারিকভাবে চার মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন ভালোভাবে গেলেও নেশাগ্রস্ত বুলবুল বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলেন। টাকা এনে না দেওয়ায় তার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। ঘরের দরজা বন্ধ করে মুখে কাপড় গুজে নির্যাতন করে। এর আগেও নির্যাতনের শিকার হয়ে কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ মঙ্গলবার সকালে বুলবুল কাচি দিয়ে তাঁর বাঁ হাতে আঘাত করে। এরপর মেঝেতে ফেলে পা দিয়ে পাড়িয়েছেন।
সুঁই দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেছেন। এ ছাড়া সিগারেটের আগুনে ছ্যাকা দেন বিভিন্ন স্থানে।
শিপলা বলেন, মূলত নেশার টাকার জন্যই বুলবুল এই নির্যাতন চালাতেন। আজ নির্যাতনের একপর্যায়ে বুলবুল সিগারেট খাওয়ার কথা বলে ঘরের বাইরে যান। এই ফাঁকে তিনি ঘর থেকে পালিয়ে কোনো রকমে খালাতো ভাই সেলিমের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে তাঁকে দুপুরে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর আত্মীয় স্বজনরা। নির্যাতনের ঘটনায় তিনি বুলবুলের শাস্তি দাবি করেন।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিপলা আক্তার সদর উপজেলার চর গড়পাড়ার ফজলুল রহমানের মেয়ে। বুলবুল ইসলাম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করছেন। তাঁর বাবা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জয়রা গ্রামের আবদুল আলীম। পেশায় চাল ব্যবসায়ী।
বিকেলে বুলবুলদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। প্রতিবেশীরা জানায়, দুপুরের পর থেকে বাড়ির কাউকে দেখা যাচ্ছে না। শিপলাকে নির্যাতনের বিষয়ে তারা জানায়, বুলবুল ঘর বন্ধ করে তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে এটা সবাই জানে।
শিপলার বাবা ফজলুর রহমান জানান, বুলবুলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে তাঁরা রাজি ছিলেন না। কিন্তু বিয়েতে রাজি না হলে তাঁদের হত্যা করা হবে আর তাঁর মেয়েকে অ্যাসিড মারা হবে এই ভয়ে বিয়েতে রাজি হন। বিয়ের সময় চার লাখ টাকা এবং তিন ভরি স্বর্ণালংকার দেওয়া হয় বলে জানান ফজলুর রহমান।
ফজলুর রহমান জানান, বিয়ের পর একদিনের জন্যও শিপলাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর কাছে আসতে দেননি বুলবুল। তিনি আরো জানান, বুলবুল যে মাদকাসক্ত তা তাঁরা জানতেন না। বিয়ের পর থেকেই টাকা-পয়সার জন্য শিপলাকে মারধর করতেন। এ নিয়ে এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় মুরুব্বিদের নিয়ে বিচার বসে। সেখানে বুলবুলের বাবা আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন। এর পরও তাঁর মেয়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিপলার শরীরে মারধরসহ সুচালো কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির পর শিপলা কয়েকবার বমি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর মাথাতেও আঘাত করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বুলবুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মানিকগঞ্জ পৌর কাঁচাবাজারে বুলবুলের বাবার চালের আড়ত। আড়ত খোলা থাকলেও তাঁর বাবাকে পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক আবুল বাশার জানান, গৃহবধূ নির্যাতনের মৌখিক খবর পেয়ে তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর সাথে কথা বলেছেন। বুলবুলকে আটক করতে তাঁর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।