পরিস্থিতি হতে পারে কাঠমান্ডুর থেকেও খারাপ
ভূমিকম্প কখন হবে তা জানা না গেলেও কোন দালান ভূমিকম্পের জন্য কতটা ঝূঁকিপূর্ণ, তা বের করা সম্ভব। ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, ঢাকার মাত্র ৩৫ শতাংশ শক্ত লালমাটি, যা ভূমিকম্পে অপেক্ষাকৃত কম ঝূঁকিপূর্ণ। আর রাজধানীতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ৬৫ শতাংশ ভবন। পুরপ্রকৌশলীর মতে, ঝুঁকিপূর্ণ দালানগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করা না হলে এখানকার পরিস্থিতি হবে কাঠমান্ডুর থেকেও খারাপ।
urgentPhoto
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার এনটিভিকে জানান, কয়েক বছর আগে রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে নিউজিল্যান্ডে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তার কয়েকগুণ বেশি ক্ষতি হয়েছিল কায়রোতে মাত্র ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে। তাই কেবল ভূমিকম্পের মাত্রা আর দূরত্ব দিয়ে নয়, বরং ভূমিকম্পের ক্ষতির বিষয়টি অনেকাংশেই নির্ভর করে মাটির গুণাগুণের ওপর, যা মানুষ আগে থেকেই জানতে পারে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, শক্ত মাটির তুলনায় নরম মাটিতে ভূমিকম্পের কম্পন কয়েকগুণ বেশি হয়। আর এমন নরম মাটিতে দালানের ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে। তিনি বলেন, ‘এক হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ মাটি লাল শক্ত মাটি। বাকি বড় একটি অংশ জলাশয় ভরাট করা নরম মাটি, যেখানে ভূমিকম্পের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি।’
ভূমিকম্পে ক্ষতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘যেটা নরম পলিমাটি, যেখানে খুব সহজেই একটা রড হাত দিয়ে ঢোকানো যায়, সেখানে যদি কোনো স্থাপনা থাকে, তাহলে ওইখানে ভূমিকম্পের যে তরঙ্গ, সেটা এই নরম মাটিতে এসে অনেক বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। অ্যামপ্লিফাই (বর্ধিত) হয়ে মাটির কম্পন বেড়ে যাবে। ন্যাচারালি খুব সহজেই এখানে বিল্ডিংগুলা কলাপ্স (ধস) হবে।’
ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার ভূমিকম্পে নরম মাটিতে ভবনধসের কারণ হিসেবে পানির তরলীভবনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘পলিমাটিতে আবার তরলীভবন বেশি হতে পারে। কারণ হচ্ছে, এখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরটা খুব কাছাকাছি থাকতে পারে, যার ফলে ভূমিকম্পের তরঙ্গ যখন আসবে তখন ভেতরে এত শক্তি বৃদ্ধি পায়, সেই শক্তির ফলে পানি ও বালু তখন এটা একটা তরল পদার্থ হয়ে যায়। যার ফলে তরল পদার্থের ওপর যদি কোনো ভারী জিনিস রাখা যায়, তাহলে এটা অটোমেটিক নিচে ডুবে যাবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের সময় দালান সরাসরি ধসে পড়তে পারে, হেলে পড়তে পারে, দেবে যেতে পারে অথবা অংশবিশেষ ভেঙে পড়তে পারে। সবারই জানার আগ্রহ, ভূমিকম্পের সময় মাটি এবং স্থাপনার ভেতরে আসলে কী ঘটতে থাকে যা দেখা যায় না।
ভবনধসের ব্যাপারটির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. তাহমিদ মালিক আল-হুসাইনী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যখন মাটি শেইক (কাঁপছে) করছে, তখন বিল্ডিংটাকে নিয়ে শেইক করছে। কিন্তু তার যে ওপরের বিল্ডিংস (স্থাপনা) আছে, তার তো একটা ভর আছে। সে কিন্তু তার জায়গায় থাকতে চায়। সে কিন্তু নড়তে চায় না। তো এই কারণেই প্রবলেমটা হয়। বিল্ডিং যদি মাটির মতো দুলত, সমান দুলত তাহলে কিন্তু প্রবলেম ছিল না। এই যে শেইক করছে, সে যে বাঁকছে- এই বাঁকার ফলেই কলামগুলো বা তার যে স্ট্রাকচার (গঠন) সে যদি না নিতে পারে তাহলেই কিন্তু কলাপস করবে।’
বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ১৫ শতাংশ ভবনে গুরুতর ক্ষতি হবে বলেও জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. তাহমিদ মালিক আল-হুসাইনী। তিনি বলেন, ‘মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে যে ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে ভাবছি সে অনুযায়ী ধরুন ঢাকা শহরের ৫ পার্সেন্ট বিল্ডিং কলাপসের (ভেঙে পড়ার) আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি আমরা মনে করি বড় ভূমিকম্প, তাহলে সিরিয়াস ডেমেজ (গুরুতর ক্ষতি) হয়তো এরাউন্ড (প্রায়) ১৫ পারসেন্ট বিল্ডিং আর যদি এতে ডেমেজ বিল্ডিং (ক্ষতিগ্রস্ত ভবন) বলেন, তাহলে এরাউন্ড ৩৫ থেকে ৪০ পার্সেন্ট বিল্ডিং।’
অবশ্য আশার কথাও শুনিয়েছেন বুয়েটের ওই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘আশার ব্যাপার হলো, যে দালানগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে, তা নির্ণয় করার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে এবং সম্পূর্ণ না ভেঙে দালানগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করারও পদ্ধতি রয়েছে। দরকার মানুষের এসব পদ্ধতি কাজে লাগানোর জন্য এগিয়ে আসা।’