সুনামগঞ্জে খোঁজ নেই শতাধিক যুবকের
সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার নামে সুনামগঞ্জের শতাধিক যুবক এখন নিখোঁজ। গত ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার থেকে যুবকদের নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ার দিকে রওনা দেয় দালালরা। রওনা দেওয়ার ১৫ দিন পর দালালরা আবার টাকা চেয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। এর পর থেকে আর কোনো খোঁজই নেই এসব মানুষের।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের শামীম আহমেদ মিয়ানমার থেকে ফিরেছেন। ৪৭ দিন সাগরে ভাসার পর তিনি দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন। urgentPhoto
শামীম জানান, একই ইউনিয়নের আছদ্দর আলীর কথায় এক লাখ ৮৫ হাজার টাকায় রাজি হন তিনি। এর মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা নগদ দেন। বাকি টাকা মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেবেন বলে জানান। তাঁর মতো আরো ১৭৯ জন একইভাবে দালালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এর পর সবাই জাহাজে উঠে পড়েন। জাহাজে ৪৭ দিন গভীরে সমুদ্রে ভাসার পর দালালরা নির্দেশ দেয়, জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার। এর পর কোনোমতে জাহাজ থেকে মাছ ধরার নৌকায় লাফিয়ে পড়ে বেঁচে ফিরে আসেন ৪০ জন। আর বাকি ১৪০ জনের ভাগ্যে কী হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
শামীম বলেন, ‘দালালরা একবেলা সামান্য ভাত দিত, সঙ্গে দিত মরিচ।’
দালাল চক্র নিখোঁজ পরিবারে ফোন দিয়ে টাকা দিতে বলছে আর টাকা না পেলে তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হবে না বলেও জানায় তারা। এদিকে, নিখোঁজ যুবকদের পরিবারে এখন শুধু কান্না আর আহাজারি ছাড়া আর কিছু করার নেই।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের দামপাড়া গ্রামের মো. রুবেল মিয়া, আবদুস সোবহান; ইউসুফপুর গ্রামের অসিম পাল, শাফেলা গ্রামের নুরুজ জামান ও আবদুল মঈন এখনো নিখোঁজ। এসব নিখোঁজ মানুষের স্বজনরা জানান, তিন মাস আগে সদর থানার কাঠইর ইউনিয়নের হোসেননগর গ্রামের জমসিদ আলী ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের তেরহাল নূরপুর গ্রামের হাবিব মিয়া এই পাঁচ যুবককে সাগরপথে অবৈধভাবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। পাঠানোর ১৫ দিন পর নুরুজ জামান ও আবদুল মঈনের সঙ্গে ফোনে পরিবারের একবার যোগাযোগ হলে তাঁরা জাহাজে থাকার কথা জানান পরিবারকে। এদিকে রুবেল মিয়া, আবদুস সোবহান ও অসিম পালের স্বজনরা জানান, তাদের ফিরিয়ে আনতে দালাল হাবিব মিয়া আরো টাকা দাবি করে। এভাবে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জুনেদ আহমদ, জমির হোসেন, সেলিম আহমদ, আবদুল গফ্ফারসহ শতাধিক যুবক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া রওনা হন।
সন্তানকে ফিরে পেতে একমাত্র সম্বল জমিজমা কিংবা গরু বিক্রি করে সেই টাকা দালালদের হাতে তুলে দিলেও সন্তানের কোনো খোঁজই পাচ্ছেন না এসব যুবকের বাবা-মা।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি। তার পরও আমরা জেলার ১০ থেকে ১২ জন মানব পাচারকারীর তালিকা করেছি। খুব দ্রুত তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।’