গান বাজিয়ে গণধর্ষণ, ভিডিও
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোরা ইউনিয়নের ১১ বছর বয়সী এক শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ সময় উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে ধর্ষণের দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করা হয়। হত্যা ও ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে হুমকি দেওয়ায় ঘটনা চেপে যায় শিশুটি। দুই সপ্তাহ পরে ধর্ষকদের বন্ধুদের মাধ্যমে ওই ভিডিও গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনা জানাজানি হয়।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা ঘিওর থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলো চর কুশুণ্ডা গ্রামের শাহিন মল্লিক ও রমজান মল্লিক। তারা দুজনই ঘিওর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। মামলার এজাহারে তাদের বয়স ২০ বছর উল্লেখ করা আছে।
জেলার শিবালয় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হারুন অর রশিদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আজ বিকেল ৫টার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের বান্দুটিয়া এলাকায় মামা বাড়ি থেকে শাহিন মল্লিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বালিয়াখোরা ইউনিয়নের ওই গ্রামে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশু, তার নানি ও চাচির সাথে কথা হয়। তাঁদের ভাষ্যমতে, শিশুটি গত ৯ মে বিকেলে শাহিনের বাড়ির পাশ দিয়ে একই গ্রামে নানার বাড়ি যাচ্ছিল। এ সময় শাহিন শিশুটিকে ফুসলিয়ে নিজ ঘরে নিয়ে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা শুরু করেন। একপর্যায়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে শাহিন। শিশুটি চিৎকার করলেও উচ্চ স্বরের গানের কারণে আশপাশের লোকজন তা টের পায়নি।
শিশুটিকে ধর্ষণ শেষে শাহিন তার বন্ধু রমজানকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে আনে। রমজান এসেও শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এই দৃশ্য শাহিন নিজের মুঠোফোনে ধারণ করে। এরপর তারা ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে হত্যা ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। শিশুটিও ভয়ে স্বজনদের কাছে না বলে বিষয়টি চেপে যায়।
শিশুটির বাবা ওই সময় বাড়িতে ছিলেন না। মুঠোফোনে তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঘটনার দুই সপ্তাহ পরে শাহিনের মোবাইল ফোন থেকে ব্লু-টুথে গান নিতে গিয়ে তারই বন্ধু ও সহপাঠী একই গ্রামের রায়হান ও হৃদয় ধর্ষণের ভিডিও ক্লিপ দেখতে পায়। এর পরই বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। তখন এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে শিশুটি স্বজনদের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা করে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা গত রোববার ঘিওর থানায় শাহিন ও রমজানকে আসামি করে মামলা করেন।
ওই গ্রামে শাহিনদের বাড়িতে গিয়ে শুধু তার ভাবিকে পাওয়া যায়। ভাবি জানান, বাড়িতে তিনি, তাঁর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ ও দেবর শাহিন থাকেন। ৯ মে ঘটনার দিন শাহিন ছাড়া আর কেউ বাড়িতে ছিল না। ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হলে শাহিন কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে যায়।
এ সময় শাহিনদের প্রতিবেশী এক গৃহবধূ পাশ থেকে বলেন, ‘ভিডিও যখন বাইর হইছে, তখন শাহিন অবশ্যই কিছু করছে।’
গ্রামে রমজান মল্লিকদের বাড়িতে গিয়ে তার চাচি ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও পাওয়ার পর থেকে রমজান কোথায় গেছে তাঁরা জানেন না।
ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘিওর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান জানান, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে গতকাল সোমবার শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।মামলার তদন্তকাজ চলছে। আর আসামিদের গ্রেপ্তার ও ভিডিও ক্লিপ উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।