ফাঁসির খবর জানেন না ড. মহিউদ্দিনের মা!
কোনো বিপত্তি না হলে আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকর হতে পারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের। তবে, শেষ মুহূর্তেও মহিউদ্দিনের শতবর্ষী মা সেতারা বেগম জানেন না তাঁর ছেলের ফাঁসির খবর। পরিবারের দাবি, বড় ছেলের ফাঁসির খবর শুনলে মা স্ট্রোক করতে পারেন আশঙ্কায় জানানো হয়নি কিছুই।
অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে। তাঁর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবরে গ্রামের মানুষও বিচলিত। একজন সুশিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবেই তারা তাঁকে এত দিন জেনে এসেছে।
ড. মহিউদ্দিনের মা কানে একদমই শোনেন না। যেহেতু তিনি কিছুই জানেন না, তাই বাড়িতে কোনো সংবাদকর্মী বা কোনো আত্মীয়স্বজনকে আসতে দেখলেই কারণ জানতে চাইছেন। পরিবারের দাবি, গত ১৭ বছর তাঁর সঙ্গে দেখা নেই ছেলের। তাঁর ছেলে যে একটি হত্যা মামলার আসামি, তাও জানেন না তিনি।
ভাঙ্গার জান্দি গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মা ও ছোট ভাই আরজু মিয়া ছাড়াও বোন রিনা বেগম এবং দুই চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া ও শাহীন মিয়া বসবাস করেন।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন স্তব্ধ হয়ে আছেন। চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, তাঁরা ড. মহিউদ্দিনের সঙ্গে মহিউদ্দিনের স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, ছিকু মিয়া ও আরেক ভাই শাহীন মিয়া গত মঙ্গলবার দুপুরে শেষ দেখা করে এসেছেন। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে ছিলেন।
ছিকু মিয়া বলেন, ‘অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাবার সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে ধরে মানুষ করেছেন। প্রায়ই আমি তাঁর বাজারঘাট করে দিতাম।’ শেষ কথা কী হয়েছে জানতে চাইলে ছিকু মিয়া বলেন, ‘ড. মহিউদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। আমি ন্যায়বিচার পেলাম না এবং আল্লাহর কাছে এর বিচার দিয়ে গেলাম। আর তাঁর স্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু এ দেশে ন্যায়বিচার পেলাম না, তাই জায়গাজমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।’
মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, ‘আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার ভাই মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় প্রথম ও দ্বিতীয় আসামি খালাস পেল অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকল। বড় ভাইয়ের ফাঁসির খবর শুনলে মা স্ট্রোক করতে পারেন—এ আশঙ্কায় তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি।’
আরজু মিয়া আরও বলেন, ‘আমার বড় ভাই নির্দোষ ছিলেন বিধায় মামলার বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেননি। বড় ভাই ভেবেছিলেন, অন্যায় করিনি, ইনশা আল্লাহ খালাস পাব। আমার ভাই রোষানলে পড়ে ফাঁসি হলো। আমার ভাইয়ের বিচার পরকালে পাব।’
স্বজনরা জানান, জানাজা বাড়ির মসজিদে এবং জুমার নামাজের আগেই দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওই গ্রামের প্রায় ৭৫ বছর বয়সি বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, ‘মহিউদ্দিন মিয়াকে আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া। তাঁর মতো একজন ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে নাই।’
গ্রামের যুবক রনি মিয়া বলেন, ‘আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশোনা করে সোনার মেডেল পেয়েছেন। তিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর মতো এমন লোক আর আমাদের এলাকায় হবে না।’
ব্যক্তিজীবনে ইয়াফি ও ইউসি নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ড. মিয়া মহিউদ্দিন। তাঁর বাবা মৃত আব্দুল মান্নান মিয়া খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন। ১৯৮১ সালে তিনি ভাঙ্গা কে এম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।