কনের দেনমোহর পাঁচটি গাছের চারা
নাটোরে চারুকলার শিক্ষার্থী বর-কনের বিয়ের দেনমোহর হিসেবে পাঁচটি গাছের চারা দেওয়ার ঘটনায় শহরজুড়ে চলছে নানা আলোচনা। ঘটনার পাঁচ দিন পর আজ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা আলোচনায় আসে।
সংস্কৃতিকর্মী, লেখক ও ডিজাইনার এম আসলাম লিটনের মেয়ে সুকৃতি আদিত্যর সঙ্গে বিয়ে হয় ঢাকার গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল বাতেন সরকারের ছেলে নাবিন আদনানের।
নাবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে তিন বছর আগে পড়াশোনা শেষ করে বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন। আর সুকৃতি একই বিভাগ থেকে সদ্য মাস্টার্স শেষ করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় প্রেম হয় দুজনের মধ্যে। গত শুক্রবার আলোচনার জন্ম দিয়ে তা পরিণয়ে রূপ নেয়।
নাটোর শহরতলীর দিঘাপতিয়া এলাকায় সুকৃতির বাবার বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি ফলদ ও বনজ বৃক্ষ দিয়ে সুকৃতিকে বিয়ে করেন নাবিন। তবে নিকাহ রেজিস্ট্রারে দেন মোহর হিসেবে গাছের চারার মূল্য ৩০১ টাকা লেখা হয় বলে জানান কনের বাবা আসলাম লিটন।
বিয়ের কাজি মাওলানা আবুল কালাম বলেছেন, ইসলামে বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে গাছের চারা দেওয়াতে কোনো বাধা নেই। দেনমোহর কনের হক।
তবে নাটোর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘দেনমোহর মেয়ের সামাজিক অবস্থান, ছেলের সামর্থ্য, অবস্থানসহ বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। গহনা হোক বা সম্পদ হোক তা টাকার অঙ্কে নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়। ইসলামে এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা রয়েছে।’
বিয়েতে এমন ব্যতিক্রমী কাজের ব্যাখ্যা দেন কনে সুকৃতি। তাঁর মতে, বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে অনেক অঘটন,অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। এটা দূর করে গাছ ও প্রকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরতে তাঁর এ উদ্যোগ।
সঙ্গীনীর এমন আবদারে বাঁধ সাধেননি বর নাবিন। বরং সাধুবাদ জানিয়ে প্রকৃতি রক্ষা ও সমাজের নষ্ট কিছু চিন্তার মূলে তাঁর স্ত্রী একটা ধাক্কা দিতে পেরেছেন—এজন্য খুশি তিনি।
দেনমোহরের গাছের চারা সংগ্রহ করা হয় নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া এলাকার একটি নার্সারি থেকে। পরে সুকৃতি-নাবিল যুগল যৌথভাবে সুকৃতির বাবার বাড়িতে গাছের চারাগুলো রোপণ করেন।
বর্তমানে সুকৃতি-নাবিন দম্পতি ঢাকায় নাবিনের বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। নাবিনের পৈত্রিক আদি নিবাস কুমিল্লার চান্দিনায় হলেও বহুদিন ধরে তারা ঢাকায় বসবাস করেন।
কনের বাবা আসলাম লিটনের ঘনিষ্ট লেখক আসাদুজ্জমান রিন্টু জানান, বিষয়টি আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। গাছ সংগ্রহের দায়িত্ব তাঁর ওপরই ছিল। ব্যক্তিগত কারণে এবং শুক্রবার হওয়ায় তিনি ওই সময় দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
রিন্টু জানান, সমাজকে একটি মেসেজ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত। বিয়েতে নাটোর শহরের লেখক, সাহিত্যিক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।