ফরিদপুরে সূর্যমুখী ফুল ছড়াচ্ছে স্নিগ্ধতা
ফরিদপুরের ফসলি মাঠগুলো এখন দেখতে অনেকটাই হলুদের গালিচা বিছানো প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। কাছে যাওয়ার পরই কেবল এমন সৌন্দর্যের দেখা মেলে। সূর্যমুখী ফুলে সজ্জিত হয়ে যেন রূপ নিয়েছে স্বর্গীয় এক বাগানের। প্রকৃতির এমন স্নিগ্ধতা টানছে প্রকৃতি প্রেমিকদের। শীতের হিমবাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে বিমোহিত করছে দর্শনার্থীদের।
এমন অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো প্রকৃতি প্রেমিক। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। ভালো লাগা স্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে নিজেদের করছেন ক্যামেরাবন্দি।
এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি ফরিদপুর শহরতলীর বদরপুর এলাকার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে। এখানে তিন একর জায়গাজুড়ে বপন করা হয়েছে বারি সূর্যমুখী-২ জাতের ফুলের বীজ। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটতে শুরু হয়।
স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফুলের চাষ। ফরিদপুর বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বৈচিত্র্যময় কৃষির জেলা ফরিদপুরে ব্যাপকতা বাড়ছে এই ফুলের চাষের। জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় দুইশতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। আর কৃষকরাও ভাল ফলন আশা করছেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুইবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টেরলমুক্ত। প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। যে কোনো তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। আর সে কারণেই ফরিদপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফুলের চাষ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, দিনদিন চাষিরা সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এই তেলে কোনো ক্লোস্টোরেল নেই। যে কারণে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এটা অন্য ফসলের চেয়ে স্বল্প জীবনকাল ও লাভজনক। সে কারণেই সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলে জানান জেলার। তিনি বলেন, সূর্যমুখী তেলে মানবদেহের জন্য উপকারী অনেক গুণ থাকায় ভোক্তাদের চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে।