নানা আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের জন্মদিন পালন
নড়াইলে নানা আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল সদর উপজেলার চণ্ডীবপুর ইউনিয়নের নূর মোহম্মদ নগরে পবিত্র কুরাআনখানি, শোভাযাত্রা, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গার্ড অব অনার প্রদান, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।
নূর মোহাম্মদ নগরে নূর মোহম্মদ শেখের বাড়িতে স্থাপিত শহীদের স্মৃতিসৌধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সদর উপজেলা, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্ট, জেলা শিক্ষা অফিস, ড্রামা সার্কেলসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়র হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাশ্বতী শীল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিংকন বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এস এ মতিন, বীরমুক্তিযোদ্ধা এস এম বাকী, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদের ছেলে মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখের পরিবারের সদস্য, শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
১৯৩৬ সালের এই দিনে নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নূর মোহাম্মদ শেখ। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মা জেন্নাতুন্নেছা (মতান্তরে জেন্নাতা খানম)। তিনি বাল্যকালেই বাবা ও মাকে হারান। পড়ালেখা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত।
নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বিজিবি)। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন। পরে ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান তিনি। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশীপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর।
১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে মহীদ হন নূর মোহাম্মদ শেখ। যশোরের শার্শা থানার কাশীপুরগ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।
নূর মোহাম্মদ শেখের গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। এখানে নির্মিত হয়েছে- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’, ‘স্মৃতিস্তম্ভ’, ‘স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ এবং নড়াইল শহরে বাসভবন ও স্টেডিয়াম।